দেবু সিংহ, মালদা২: মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২নং ব্লকের মালিওর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্জুনা গ্রামে সাত বছর আগে নির্মাণ হয়েছিল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের। আশায় বুক বেঁধে ছিলেন গ্রামবাসীরা। সময়মতো চিকিৎসা র সুবিধা পাবেন। কিন্তু সাত বছরের বেশি কেটে গেল আজও ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা মেলেনি। এই নিয়ে ক্ষোভ জমছে এলাকায়।তারা জানালেন অবিলম্বে এই অর্জুনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু না হলে বড়োসড়ো আন্দোলনে নামবেন তারা।
অর্জুনা গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল জানালেন দীর্ঘ সাত থেকে আট বছর আগে এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র টি তৈরি হয়ে গেছে। কিন্তু তারপর থেকে একদিনের জন্য কোন স্বাস্থ্যকর্মীর দেখা মেলেনি। স্বাস্থ্যকর্মীরা আসলেও গ্রামের অন্য একটি বাড়িতে বসে কাজ করে চলে যাচ্ছে। এখন বর্তমানে এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র টি কোন কাজ হচ্ছে না। আমরা চাই অবিলম্বে এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র টি চালু হোক তাতে আমাদের গ্রামের লোকের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা লাঘব হবে।
গ্রামে স্থানীয় এক বৃদ্ধ বসন্ত মণ্ডল জানালেন স্বাস্থ্য কেন্দ্র টি বিগত সাত বছর থেকে তৈরি হয়ে পড়ে আছে। কোন কাজকর্ম হচ্ছে না। এই নিয়ে আমি ব্লক সমষ্টি আধিকারিক এর কাছে দরবার করেছিলাম। কিন্তু তিনিও এই সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু না হওয়ার ফলে স্থানীয় লোকজনরাও পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধপত্র পাচ্ছেন না। স্থানীয় একটি বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা বসেন। ব্যবহার না হওয়ার ফলে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনের দরজা-জানলা গুলি ভেঙে যাচ্ছে। তদারকি করার কেউ নেই।
স্থানীয় যুবক নন্দলাল মণ্ডল জানালেন গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে তাকে এখান থেকে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের অধীনে গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমরা চাই অবিলম্বে এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চালু হোক তাহলে অর্জুনার মতো গ্রামীণ এলাকাতে গ্রামবাসীরা ন্যূনতম সরকারি চিকিৎসা সুবিধা পাবে।
স্থানীয় অর্জুনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন জানান আমার বিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীরা অসুস্থ হলে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। তাকে গাড়িতে করে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। নতুন ও পুরাতন অর্জুনা গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু নির্মাণ হওয়ার পরে আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু হলো না। অভিলম্বে প্রশাসনের উচিত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র টি চালু করা।
রাজ্যের ক্ষুদ্র কুটির শিল্প পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজামুল হোসেন জানালেন “আমি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কে এ বিষয়ে জানাবো যাতে এলাকার বন্ধ হয়ে থাকা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলি অবিলম্বে চালু করা যায় সেই ব্যবস্থা নেব”।
এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: সাগর বসাক জানালেন আমি এই ব্লক হাসপাতালে দায়িত্বে পাঁচ মাস হল এসেছি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলিতে ফার্স্ট ও সেকেন্ড অক্সিলারি নার্স ও মিডওয়াইফারি দ্বারা পরিচালিত হয়। মূলত অর্জুনা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র টি পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকায় এখনো স্বাস্থ্য দপ্তরের হাতে হ্যান্ডওভার হয়নি। তাই সেখানে একটি ভাড়া বাড়িতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজ কর্ম চলছে। আমি ব্লক প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলো মিটিয়ে খুব তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র টি তুলে দিলে আমরা কাজ আরম্ভ করে দেব।
সমস্ত রকম প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কবে থেকে চালু হয় এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র টি তারই অপেক্ষায় এলাকার জনসাধারণ ।