মলয় দে নদীয়া :- নদিয়ার শান্তিপুরের রাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে অষ্টকালী ভবন। তবে নামে অষ্টকালী ভবন হলেও এখানে প্রায় বৃন্দাবনের মতো পরিস্থিতি দেখা যায় ভাঙ্গারাস উপলক্ষে। এই মন্দিরের সমস্ত কিছুই দেখা যায় শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কিত বিষয়।
মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, ১৯৮৫ সাল নাগাদ এই মন্দিরের যিনি প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় অরবিন্দ কুন্ডু, তার হাত ধরে এই মন্দির এবং এই উৎসবের প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কোন এক রাত্রে তিনি স্বপ্ন দেখেন সেই স্বপ্নে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কালী পুজো করতে হবে একসঙ্গে আটটি । আর এই কালী পুজো হবে একই ক্ষণে একইসঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। শুধু তাই নয় তার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনও নির্ধারিত করে দেন অদৃশ্য নির্দেশ দাতা। এরপর উনি ঘুম থেকে উঠে ক্যালেন্ডার দেখলে তিনি দেখেন সেটি পুজো করার অত্যন্ত ভালো একটি যোগ। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রীতিমতো ভয় পেয়ে যান তিনি, চিন্তায় পড়ে যান একসঙ্গে আটটি কালি কি করে তিনি পুজো করবেন। এরপর তিনি তার পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলেন, সেই সময় সেই ক্ষণেই এরপর আটটিকালি পুজো করা হয়েছিল। এর পরেই একটি ঘটনা ঘটে। জানা যায় পুজোর শেষে এক মহিলার আগমন ঘটে, পুজোর পরে সেই ছাই উনি মাখছিলেন। ভর হলে মহিলাদের যেমন দেখা যায় তাকেও ঠিক তেমনি দেখা গিয়েছিল। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করেন। সেই মুহূর্তে ওই মহিলা একটি কথা বলে গিয়েছিলেন, তাদের মন্দিরের এই মাটি খুবই পবিত্র এবং এই জায়গাটি তীর্থস্থান এর মত উপলব্ধি দেয়। এই উক্তি করে তিনি চলে যান। সেই মুহূর্তে বাড়ির কোন সদস্যরা সেটি উপলব্ধি করতে না পারলেও, কিন্তু তার প্রায় ১০-১২ বছর পরে ১৯৯৭ সালে মূলত দূর্গা পূজা করার জন্য এই মন্দির যখন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তার দু’বছর পরে অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে এই প্রাণ গোবিন্দের বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকে আজও সেই অষ্ট কালী মায়ের ঘট গর্ব গৃহে থাকে এবং প্রাণ গোবিন্দের সঙ্গে নিত্য পূজিতা হয়।
তাদের বিগ্রহের নাম শ্রীরাধা প্রান গোবিন্দ জিউ। শুধুমাত্র রাসের এই তিন দিনই এই মন্দির প্রাঙ্গনে আসেন। এবং রাস উৎসবে সকলে একসঙ্গে মেতে ওঠেন। এবং বহু মানুষ এই মন্দিরে আসেন বিগ্রহের দর্শন পেতে। ৮ থেকে ৮০ সকলে ই এখানে এক স্বর্গীয় পরিবেশ অনুভব করে থাকেন। বয়স অনুযায়ী যুবক-যুবতীদের তাদের মতন করে শিশু কিশোর কিশোরী তাদের মতন করে ধর্মীয় বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী শুনে দেখে আনন্দ পান অন্যদিকে মহিলারা এই রাশের মূল আকর্ষণ চাক ঘোরানোর মধ্য দিয়ে মানসিক করে থাকেন অনেকে আবার মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার জন্য চাক ঘুরিয়ে যান। যে চাকে অধিষ্ঠান করেন শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন রূপ এবং সাথে গোপিনী । যুবক-যুবতীদের মতে ধর্মীয় আবেগ ছাড়াও সেলফি তোলার আদর্শ জায়গা এটি। এক কথায় বলতে গেলে দর্শনার্থীদের কাছে শান্তিপুরের এই দ্বিতীয় বৃন্দাবনে উপস্থিত হলে তবেই পূর্ণতা পায় রাশের রস আস্বাদন।