মলয় দে নদীয়া :-নবদ্বীপের রাস ভেঙে যখন শান্তিপুরে আসে তখন পালন করা হয় শান্তিপুরের ভাঙ্গারাস। এই ভাঙ্গারাস শান্তিপুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব। শান্তিপুরের প্রায় পঞ্চাশটিরও বেশি বিগ্রহ বাড়ি এবং অন্যান্য শতাধিক পাড়া ও বারোয়ারিতে ভাঙারাসের উৎসব পালন করা হয়ে থাকে, যেখানে দেখানো হয় শ্রীকৃষ্ণের একাধিক লীলার নিদর্শন এবং ধর্মীয় বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা-পার্বণ। দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন শান্তিপুরে ভাঙ্গারাসে শামিল হতে। তবে অতীতে শান্তিপুরের মত ছোট একটি জায়গাতে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। বিশেষ করে মহিলাদের স্নান এবং বাথরুমে সমস্যা লেগেই ছিল। পৌরসভা থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট পর্যাপ্ত ছিল না। সেই সমস্ত চিন্তা ভাবনা করেই ২০১৮ সালে বেশ কিছু স্থানীয় যুবকেরা মিলে রাসযাত্রার পূণ্য তিথিতে আয়োজন করেন আগত দর্শনার্থীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা। সে সময় সংখ্যাটা ৪-৫ শো র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে প্রায় 4- -5 হাজারে পৌঁছেছে । যদিও প্রথমে তাদের চিন্তা ভাবনা ছিল পুজো করার কিন্তু সেই পুজোর আনন্দ থেকেও জনসভায় বেশি আনন্দ তা বাদে খামখা সংখা বৃদ্ধি করে লাভ কি! শান্তিপুরে যে সংখ্যক পূজা হয় তা অনেকেই দেখে শেষ করতে পারেন না তাই প্রকৃত কাজ করা দরকার এই মানসিকতা নিয়েই যুবকরা রাস যাত্রীদের সেবায় মনোনিবেশ করেন।
বিগত প্রায় ছয় বছর ধরে এই আয়োজন করে আসছে শান্তিপুরের বেকার সম্প্রদায়। বেকার সম্প্রদায় নাম হওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, ওই সময় যারা এই কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন বেশিরভাগই ছিলেন বেকার আর সেই কারণেই এই নামকরণ। তবে বর্তমানে এখন তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত অনেকে আবার ব্যবসায়ী কেউবা আছেন হকার !তবুও কাজ করবে পাশাপাশি শান্তিপুরের এই প্রধান উৎসবের সময় তারা প্রত্যেকেই এই কাজটিই করে থাকেন। শান্তিপুর স্টেশন সংলগ্ন নীলমণি হাটের যে বিস্তার ফাঁকা জায়গা রয়েছে সেখানেই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যার ফলে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন আগত দর্শনার্থীরা।
তারা জানাচ্ছেন ভাঙ্গারাসের সময় আমরা যেটা দেখি একাধিক বৃদ্ধ মানুষেরা অসহায় ভাবে রাস্তার পাশে বসে থাকেন, যাদের বাথরুম স্নান খাওয়া দাওয়ার সমস্যা হয় প্রবল। শান্তিপুর পৌরসভা স্নান খাওয়া-দাওয়া বিভিন্ন কিছুর ব্যবস্থা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়াও যে সমস্ত জায়গায় এগুলি পৌরসভার তরফ থেকে করা হয় তা অনেক দর্শনার্থীদের কাছেই অবগত নয় , আর সেই কারণেই আমরা স্টেশন সংলগ্ন শান্তিপুর হাটের চালাটি অনেক বড় জায়গা আর সেই কারণেই আমরা এখানে বেকার সম্প্রদায়রা মিলে শান্তিপুরে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যাহ্নভোজন এবং থাকা খাওয়া বাথরুমের ব্যবস্থা করেছি। তবে নিরাপত্তার প্রশ্নে এ বিষয়ে তারা দুজন মহিলা এবং দুজন পুরুষ পুলিশ নিযুক্ত করার জন্য শান্তিপুর থানার পুলিশ প্রশাসন কে ধন্যবাদ জানান কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন হট মালিকদের প্রতি কারণ তাদের মূল্যবান এই জায়গাটি ব্যবহার করতে না দিলে এই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হতো না। অন্যদিকে পুরসভার সাফাই কর্মীদের সহযোগিতার জন্য তারা কুর্নিশ জানিয়েছেন।
তবে শুধু খাওয়া দাওয়ায়ই নয় স্থানীয় একটি কীর্তনের দল সকলকে মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে এবং শান্তিপুরের মূল ঐতিহ্য তুলে ধরতে কীর্তন পরিবেশন করবেন।
ভাঙা রসের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলবে এই পরিষেবা। তবে সুবিশাল এই খরচের ব্যবহার গ্রহণ করে থাকেন তারা নিজেরাই কেউ দিয়েছেন পাতা। কেউবা কাঁচা আনাজ কেউ রান্নার বিভিন্ন সামগ্রী আর এভাবেই গোটা বিষয়টি সহজ হয়ে উঠেছে তবে এক্ষেত্রে অনেক শুভাকাঙ্খীরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় সাতটি শৌচাগার দুটি স্নানের জায়গা এবং প্রায় এক হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা করে তারা আগত রাসযাত্রীদের সেবার প্রতীক্ষায়।