মায়েদের প্রচেষ্টাতেই নদীয়ায় বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য গড়ে উঠলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সৃজনী একাডেমি

Social

মলয় দে নদীয়া :-শিক্ষার অধিকার সকলেরই রয়েছে। তবে অনেকেই শিক্ষা থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হয়ে যায় বঞ্চিত। কেউ বঞ্চিত হন অর্থাভাবে কেউবা বঞ্চিত হন শারীরিক ভাবে সক্ষমতার অভাবে। মূক এবং বধির ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পড়াশোনা শিখতে হয়। মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সবার মাঝে বসে ক্লাস করতে হয়।

আর এই সব সমস্যার সমাধান করতে হয় মায়েদেরই। কারণ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা আর্থিক উপার্জনের ব্যস্ত থাকেন।
তবে শান্তিপুরে এইরকমই বেশ কিছু মায়েরা তাদের বিশেষভাবে সক্ষম বাচ্চাদের জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন বিশেষ প্রশিক্ষণ গড়ার জন্য।

তারা বলেন, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের সরকারি একাধিক সুবিধা থাকলেও সেই অর্থে সুবিধা পায় না বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা। যদিও বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য রয়েছে বিশেষভাবে পড়াশোনার ব্যবস্থা। সেগুলি বেশিরভাগই রয়েছে জেলা সদর কিংবা শহরতলী কলকাতায়। তাছাড়াও সেই সমস্ত শিশুদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজন হয়, প্রচুর পরিমাণে অর্থের। জেলায় বেশ কিছু বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের নিয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলি মুষ্টিমেয়। অত্যন্ত গ্রামে সেই সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, এবং গ্রাম থেকে শহরতলীতে গিয়ে সেই সমস্ত শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষা প্রাপ্ত করতে যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ এবং সময় সাপেক্ষ। সেই কারণেই শান্তিপুরের গৃহবধূ মধুমিতা গোস্বামী সেন শান্তিপুরের যশোদানন্দ প্রামাণিক এলাকায় চালু করলেন বিশেষভাবে চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

আর তারই এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল সোমবার সকালে। এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বেশ কিছু বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু এবং তাদের অভিভাবকেরা। মূলত শান্তিপুর শহরের বুকে এই ধরনের শিক্ষা কেন্দ্র চালু হওয়ায় খুশি প্রত্যেকেই।

শান্তিপুরের গৃহবধূ মধুমিতা গোস্বামী সেন, তার নিজের সন্তানও বিশেষভাবে সক্ষম। তবে হেরে যাননি তিনি, চাইলেই নিতে পারতেন দ্বিতীয় সন্তান। তা না করে তিনি এক বিশেষ ব্রতী নিয়েছেন নিজের জীবনে। ইতিমধ্যেই নিজের সন্তানকে তিনি করিয়েছেন মাধ্যমিক পাস। সন্তানকে সঠিক শিক্ষা প্রদান করতে গিয়ে বেশ কিছু অভাব লক্ষ্য করেন তিনি। আর সেই কারণে ই তার নিজের সন্তানের মত কোন শিশুকে যাতে সেই বাধার সম্মুখীন হতে না হয় সেই কারণেই এই উদ্যোগ বলে জানান তিনি।

শান্তিপুরের যশোদানন্দ স্ট্রিট এ নিজের পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে শান্তিপুরের বাসিন্দা বিজলী খা র। বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়িটি খালিই পড়েছিল। তার ইচ্ছে ছিল এই বাড়িটি কোন সমাজসেবামূলক কাজে ব্যবহার করার। ঠিক তখনই মধুমিতা দেবী যোগাযোগ করেন বিজলী দেবীর সঙ্গে। প্রস্তাব দেন তার এই বাড়িটিতে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার। এক কথাতেই বিজলী দেবী রাজি হয়ে যান। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়িটি তাদেরকে দিয়ে দেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করার জন্য।

উদ্বোধনের দিনই বিশেষভাবে চাহিদা সম্পন্ন একাধিক অভিভাবক আসেন তাদের সন্তানদের নিয়ে। দুপুরের কুটিরপাড়া থেকে শুভ্রা প্রামানিক এসেছিলেন তার সন্তান প্রিয়াংশি প্রামাণিককে নিয়ে। শান্তিপুরে গোপালপুর এলাকা থেকে সামিনা হুসেন তার দুই সন্তান রিয়া হোসেন ও জিতু হোসেনকে নিয়ে আসেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। প্রত্যেকেই তারা এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাদের সন্তানদের সঠিক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য আগ্রহী বলে জানালেন।

সপ্তাহে একদিন করে আসবেন একজন স্পেশাল এডুকেটর হাকিব বিশ্বাস। যিনি ২০০৮ সাল থেকে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। এই সমস্ত শিশুদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ এর ক্ষেত্রে যথেষ্টই আর্থিক খরচ হয় বাবা-মায়ের। কি কারণে অনেকেই সঠিকভাবে শিক্ষা নিতে পারেন না। ওদের কথা মাথায় রেখেই ন্যূনতম খরচে চালু করা হয় এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। মাসিক দেড় হাজার টাকার বিনিময় সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস করতে পারবেন যেকোনো বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা। সপ্তাহে একদিন করে আসবেন একজন স্পেশাল এডুকেটর এবং বাকি দুদিন তারই সহকারী শিক্ষকরা সেই সমস্ত শিশুদের প্রশিক্ষণ দেবেন বলে জানা যায়। স্বাভাবিকভাবেই শান্তিপুরের বুকে এধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলাতে খুশি সমস্ত অভিভাবকরা।
তবে খরচের বিষয়ে, মধুমিতা গোস্বামী সেন কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের উপকরণ এবং স্পেশাল এডুকেটেড খরচ যোগাতে ন্যূনতম মাসে দেড় হাজার টাকা নেওয়া হবে। সপ্তাহে দুদিন অটিজিম, স্পিচ থেরাপী, এ ডি এইচ টি , বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা সমাধানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাদের। অভিভাবকদের ক্ষেত্রেও বাচ্চাদের গাইড করার বিষয়ে পরামর্শ। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, অতীতে এক একটি ক্লাস এক-দেড় হাজার টাকায় করাতে হয়েছে তাকে, তার ওপর সারাদিন ধরে বিশেষভাবে সক্ষম এই বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া এবং ক্লাস করানো যথেষ্ট কষ্টকর।

Leave a Reply