মলয় দে নদীয়া:- ঐতিহাসিক মতানুযায়ী যীশু খিস্ট্রের জন্মের আগে থেকেই রোমানরা ২৫শে ডিসেম্বর দিনটিকে বিশেষ ভাবে উদযাপন করতেন । প্রাচীনকালে এই সময় রোম দেশে তাদের কৃষি দেবতা ও শনি গ্রহের সন্মানে এক বিশেষ অনুষ্ঠান উদযাপন হতো । সেই সময় ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সমস্ত কিছুই বন্ধ থাকতো । যদিও যীশুর অনুসারীরা পরবর্তীকালে উক্ত অনুষ্ঠান কে ‘ বিধর্মী অনুষ্ঠান ‘ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ।
যীশুর জন্মদিন সম্পর্কে অনেকেই অনিশ্চিত ছিলেন বলে ৬ ও ১০ ই জানুয়ারি আবার অনেকে ১৯,২০ এপ্রিল , অনেকে ২০শে মে তারিখে যীশুর জন্মদিন পালন করতেন ।
তবে সূত্র অনুযায়ী জানা যায় ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দ এ কুমারী মরীয়ম গর্ভবতী হবার দিন থেকে ৯ মাস হিসাবে রোমান বর্ষ পঞ্জীতে ২৫শে ডিসেম্বর যীশু খিষ্ট্রের জন্মদিন । আর এই দিনকেই বড়দিন হিসাবে উদযাপন করা হয় । এর পরবর্তী কলে রোমে খিষ্ট্র ধর্ম রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে । পরবর্তী কালে বড়ো দিন তার প্রাণ ফিরে পায় ।
হিন্দুদের দুর্গা পুজোর মত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের বৃহত্তম উৎসব এই ২৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়ো দিন । 24 শে ডিসেম্বর রাত থেকেই শুরু হয় বিশেষ উৎসব । আলোর রোশনাই সমস্ত চার্চ গুলি সহ রাস্তাঘাট সেজে ওঠে , চলে পারস্পরিক হৃদ্রতা বিনিময় , খাদ্য দ্রব্য সহ পোশাক পরিচ্ছেদ ও নিত্য নতুন জিনিসের আদান প্রদান , এর সাথেই চলে ঈশ্বর পুত্র ও শান্তির বার্তা বাহক যীশুর উপাসনা । এটাই আমাদের সবার কাছে বড়ো দিন বলে পরিচিত ।
এই ক্রিস্ট মাসের ও বড়ো দিনের প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো মোমবাতি, হলি ও বাবল , তুষার দৃশ্য, উত্তর দেশীয় শীতের জন্তু জানোয়ারদের ছবি , শীতকালীন গাছ পালা এবং ক্রিস্ট মাসের প্রধান চরিত্র সান্তা ক্লজ ।
সান্তা ক্লজ নামটির সাধারণ অর্থ হলো সেন্ট নিকোলাস । ক্রীস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে নিকোলাস ছিলেন অধুনা তুরস্কের বিশপ । তিনি শিশুদের পরিচর্যা , দয়া ও উপহার প্রদানের জন্য খ্যাতনামা ছিলেন প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে বিশপের পোশাক পরিহিত নিকোলাস তার সহকারীদের সহায়তায় বিগত এক বছরে শিশুদের আচার আচরণের খোঁজ খবর নিতেন । তারপর তিনি ঠিক করতেন সেই শিশু উপহার পাবার যোগ্য কি না । এরপর তিনি শিশুদের উপহার প্রদান করতেন । নেদারল্যান্ড ও মধ্য ইউরোপ এ তার নামে উপহার আদান প্রদানের রীতি চালু হয়ে যায় । এরপর সংস্কার আন্দোলনের সময় উপহার প্রদানকারীর চিরাচরিত চরিত্রটির বর্জন করা করে যীশু খ্রীষ্ট চরিত্রটির আবির্ভাব হয় এবং উপহার প্রদানের তারিখ নির্ধারিত হয় ক্রিস্ট মাস পূর্ব সন্ধ্যা । আর এগুলোই বড়োদিনের তাৎপর্য ।
তবে বর্তমানে কোভিড ১৯ এর প্রেক্ষাপট দূরীভূত হয়ে মানুষের জীবনধারার মানোন্নয়ন ঘটুক , আসুক কর্মের জোয়ার , পরিবর্তন ঘটুক মানুষের আর্থ সামাজিক জীবনধারার । এটাই হোক আজকের দিনে ঈশ্বরের বার্তা বাহক যীশুর কাছে প্রার্থনা ।