মলয় দে নদীয়া :-শান্তিপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের জলেশ্বর তিলিপাড়ার স্ট্রীটে এক প্রকার অনাঢ়ম্বেই নতুন জগৎ দেখলেন ১৭ জন বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষ।
শান্তিপুর সুত্তাগড় অঞ্চলের বছর বছর তিরিশ বয়সী বিশ্বজিৎ ভৌমিক, গতকাল সকালেও কিছুটা পথ টোটো তে আসার পর হামাগুড়ি দিয়ে , আসতে হয় । এভাবেই যাতায়াতের জন্য, ইচ্ছা থাকলেও বিভিন্ন উৎসব এবং প্রয়োজনে কোথাও যেতে পারেনি আজ পর্যন্ত। কিন্তু বিনামূল্যে টাই সাইকেল পেয়ে খুব খুশি জানায়, এবার একটা কিছু ছোটখাটো নতুন ব্যবসা করা যেতে পারে।
আট বছর আগে লরিচালকের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন রঘুনাথ বিশ্বাস, থেকে পড়ে গিয়ে তার কোমড়ের হাড় ভেঙে যায়। সেও কাল টাই সাইকেল পেয়ে সোজা হয়ে, বসে এক হাতে হ্যান্ডেল অন্য হাতে প্যাডেল ঘুরিয়ে আবারো রোজগার করার আত্মবিশ্বাসে।
ঘোড়ালিয়ার গৃহবধূ জয়ন্তী সরকারের অভাবী স্বামী একদিকে তাঁতবুনে সংসার খরচ জোগাড় করেন অন্যদিকে সংসারে যাবতীয় কাজ এতদিন যাব তাকেই করতে হতো, এবার হুইলচেয়ার পেয়ে জয়ন্তী দেবী জানালেন ঘরের মধ্যে নড়েচড়ে অন্তত কিছু কাজ সারতে পারবেন তিনিও।
গবার চর তালতলা থেকে আগত প্রেম কুমার বিশ্বাস এক বছর আগে সাইকেলে করে কাজ করতে যাওয়ার সময় পেছন থেকে লরিতে এসে তাকে ধাক্কা মারে বাদ যায় একটি পা, একমাত্র উপার্জনের তিনিই ভরসা হওয়ার কারণে, স্ত্রী পরের বাড়িতে পরিচায়িকার কাজ করে কোন রকমে দুবেলা দুমুঠো যোগাড় কর করেন ভাত। ছেলে মেয়ের পড়াশোনা প্রায় বন্ধু হয়ে যাবার যোগাড় ছিলো, তবে এবার ট্রাই সাইকেল পাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াবে পরিবার এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
১৪ বছরের দেবিকা প্রামানিক সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে শান্তিপুর গয়েশপুর হাই স্কুলে, বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে স্কুল হওয়ার কারণে পরিবারের সহযোগিতা নিতে হতো এতদিন। দারিদ্রতার কারণে পরিবারের সদস্যরা সময় দিতে না পারলে স্কুলে যাওয়া হতো না।এবার তার মুখেও হাসি ফুটেছে।
সুশান্ত সরদার অমিত ধরের মত এইরকমই ১৬ জনের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছে ইউনিভার্সাল লিবারাল এন্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্ণধার দেবাশীষ মন্ডল। তিনি বলেন, প্রতি কয়েক মাস আগে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানে 40 জনকে , ঘরের কোন থেকে সমাজের মূল স্তরে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে সেদিন, এই ১৭ জন মানুষকে খুশি করা সম্ভব হয়েছিল না তাদের জন্যই আজ এই বিশেষ ব্যবস্থা। আগামীতে বধিরদের জন্য শ্রবণ যন্ত্র বিনামূল্য দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
সম্পূর্ণ অনাড়ম্বে হওয়া এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় কাউন্সিলর দীপঙ্কর সাহা কে দেখা গেল টেবিলে বসে আগত বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের বাসিন্দা সার্টিফিকেট প্রদান করতে, তিনি জানান এভাবেই মানুষের কাজে নিয়োজিত থাকতে পারলে ভালো লাগে।
শান্তিপুর প্রতিবন্ধী সংগঠনের সভাপতি সুজন দত্ত বলেন, দেবাশিস মন্ডলের মতো সুহৃদয় মানুষের জন্য তারা সমাজের মূল স্তরে। দু বছর করোনা পরিস্থিতি কারণে এ ধরনের শিবির বন্ধ ছিল ফলে অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো বিভিন্ন সহায়ক সরঞ্জাম।