শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব দিবসে অনুষ্ঠানে সামিল মতুয়া

Social

মলয় দে, নদীয়া :-মতুয়া শব্দের উৎপত্তি মাতুয়ারা থেকে যার মানে ঈশ্বর প্রেমে পাগল। মাতুয়ারা আঞ্চলিক শব্দ মাতুয়া, কোনো ধর্ম না। উচ্চবর্ণের মানুষের দ্বারা, এঁরা সর্বদা ধর্মীয়-সামাজিক অবহেলা ও অত্যাচারের সম্মুখীন হত। এই সময় অবতীর্ণ হন, শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর। উনি ১৮১২ সালের আজকের দিনে বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার সফলাডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার জীবনধারা সমাজের একটা অন্ধকার দিক কে মুছে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন। ব্রাহ্মণ সন্তানেরাও তার সংস্পর্শে আসেন, ধর্মীয় অবহেলা জাতিবিদ্বেষ সামাজিক বৈষম্য সহ বিভিন্ন ভাবে বঞ্চিত হওয়া নমস্য জাতিকে হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দির গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। এবং তাদের জন্য আধুনিক ধর্মমত ও রীতিনীতির প্রচলন করেন। তাঁর প্রবর্তিত এই নতুন ধর্ম দর্শন হলো আধুনিক কুসংস্কারমুক্ত যা মুল হিন্দু ধর্মীয় আচরণ থেকে প্রায় সম্পূর্ণ আলাদা। এজন্য অনেকেই মতুয়া ধর্ম কে স্বতন্ত্র ধর্ম বলে থাকেন।

এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট মতুয়া গবেষক ডক্টর বিরাট কুমার বৈরাগ্য বলেন, মতুয়া ধর্ম অনুসারীরা হলেন বৈষ্ণব ধর্ম বা রামকৃষ্ণ মিশনের অনুসারীদের মত হিন্দু ধর্মের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর নিম্ন বর্ণের মানুষের জন্য ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু বিদেশি শাসন ও ব্রাহ্মণ সমাজের একাংশের গ্রামের কাছে, তার মাত্র ৬৬ বছর বয়সের জীবন অনুন্নত শ্রেণীর মানুষের সামগ্রিক ভাবে সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। হরিচাঁদ ঠাকুরের সুপুত্র গুরূচাঁদ ঠাকুর পিতার অবর্তমানে তার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য আদেশ করেন। গুরুচাঁদ ঠাকুরই সর্বপ্রথম ধর্মীয় গণ্ডির বাইরে মতুয়াদের সামাজিক-রাজনৈতিক বিকাশের দিকে প্রশস্ত করেন। অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলায় কয়েক হাজার বিদ্যালয় স্থাপন, মীড সাহেবের সহযোগিতায় নমস্য দের চন্ডাল গালি থেকে পরিত্রাণের জন্য আইনি লড়াই করেন, নমঃশূদ্র দের একত্রীকরণ ইত্যাদি কাজে নিযুক্ত করেন।

শ্রী শ্রী ঠাকুর বলেছিলেন “এই জাতি একদিন রাজা হবে।” গুরুচাঁদ ঠাকুরের পুত্র শশীভূষণ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে প্রথম সরকারি চাকুরিজীবি হিসাবে সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। গুরুচাঁদ ঠাকুরের পৌত্র প্রমথ ঠাকুরই দেশভাগের প্রাক্কালে, কেন্দ্রীয় আইনসভার বিভিন্ন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করেন। তার নামে ঠাকুরনগরে একটি কলেজও আছে। পড়া ভালো বাবাসাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকর তার নিজের জন্মভূমি মহারাষ্ট্র থেকে কোন ভোটের টিকিট না পেলে তখন বাংলার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলা থেকে তার জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করেন এবং তাকে ভোটে জিতে প্রথমবারের জন্য কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য করেন। মতুয়া কোন ধর্ম নয় একটি লোকসম্প্রদায় যদিও উৎপত্তি ওপার বাংলায় তবে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের দুই কোটি জনসংখ্যা এই ধর্মাবলম্বী সেজন্য বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক এই সম্প্রদায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রথমে মতুয়ারা কংগ্রেসের সমর্থন থাকলেও, ১৯৭৭ সালের পর তারা ঝোঁকেন বামফ্রন্টের দিকে, কিন্তু নাগরিকত্ব এবং জমি অধিকারের ইস্যুতে তাদের আশা ভঙ্গ হয়। হাজার নয় সালের এবং তৃণমূল উভয়পক্ষই আলাদা আলাদা করে মতুয়াদের সমর্থন চায়। এবার মমতাকে বেছে নেন। ২০১০ সালে বড়মা মমতাকে ফতুয়া মহাসভার মুখ্য পৃষ্ঠপোষক ঘোষণা করেন। ২০১১ সালে ঠাকুরনগরে সম্প্রদায়ের পূর্ণ পুষ্করিণী কামোনাশাগার সংস্কারের জন্য অনুদান অনুমোদন করেন। বড়মার সাথে দেখা করতে যান মমতা। দুদিন পর মতুয়া ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন করার কথা সরকার ঘোষণা করে। ২০১৪ সালে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল টিকিটে কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর জয়ী হন। বড়মার অপর এক ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর তৃণমূলের মন্ত্রী ছিলেন এবং পুত্র বিজেপিতে যোগদান করেন। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের সরাসরি রাজনীতির ভিত্তিতে ভাগ হয়

। বর্তমানে ছটি লোকসভা আসনে এই সম্প্রদায়ের উপস্থিতি রয়েছে।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের মন্দিরে পুজো দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিভিন্নভাবে মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছেন। এই উপলক্ষে নদীয়া জেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের বেশ কিছু অনুষ্ঠান লক্ষ্য করা যায়।

Leave a Reply