মলয় দে, নদীয়া:-ঐতিহ্য অত্যন্ত প্রাচীন! অষ্টম ও নবম শতকেও এদেশে পালাগান ও পালার অভিনয় প্রচলিত ছিল। শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের আগেও রাঢ়, বঙ্গ, সমতট, গৌড়, পুণ্ড্র, চন্দ্রদ্বীপ, হরিকেল, শ্রীহট্টসহ সমগ্র ভূখণ্ডে পালাগান ও কাহিনি কাব্যের অভিনয় প্রচলিত ছিল। খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে থেকেই কৃষ্ণযাত্রার অভিনয় হত। সম্রাট অশোক তার অষ্টম শিলালিপিতে উৎসব অর্থে যাত্রাপালার কথা উল্লেখ করেছেন, ১৫০৯ সালে অভিনীত পালাটির নাম “রুপক্মিণি হরণ”।
তবে নবদ্বীপের কৃষ্ণ কমল প্রথম মুদ্রিত যাত্রাপালা সৃষ্টি করেন। ১৮৮২ সালে স্বপ্নবিলাস ১৮৭৩ সালে দিব্যউন্মাদ, ১৮৭৪ সালে স্বপ্ন বিলাসের জনপ্রিয়তার কারণে ১৮৮২ সালে সুইজারল্যান্ড থেকে ডক্টরেট উপাধি পান প্রথম।
দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ যেমন ঢাকার প্রথম নাটক, তেমনি কৃষ্ণ কমল গোস্বামীর স্বপ্ন বিলাশ পশ্চিমবাংলার। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি কুরুচি ও অশ্লীলতা প্রকাশ পেতে থাকে সস্তা জনপ্রিয়তার কারণে। মতিলাল রায় গিরিশচন্দ্র ঘোষ, সুললিত ছন্দ, অমৃতাকার এবং গৈরিশ ছন্দের ব্যবহার করে নবজাগরণ ঘটায় নাট্যজগতে। ১৮৭২ সালে কলকাতায় প্রথম জাতীয় রঙ্গমঞ্চের প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে স্বদেশী যাত্রা নিয়ে এলেন মুকুন্দ দাস, সুপ্রেমে ঐক্যবদ্ধ হল যুবসমাজ! ইংরেজ বাজেয়াপ্ত করে তার বেশ কয়েকটি যাত্রাপালা। মুসলিম ঘরানার যাত্রাপালা লিখতেন মোজাহার আলী। জয় দুর্গা, অন্নপূর্ণা সে সময় সেরা দল ছিলো। ১৯৭৬ সালে চিত্র পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমনের পরিচালনায় জয়দুর্গা অপেরার বর্গী এলো দেশে পালাটি চলচ্চিত্রায়ন হয়। যাত্রা জগতে প্রথম নায়িকা মঞ্জুশ্রী মুখার্জি, এর আগে অবশ্য পুরুষরাই নারীদের ভূমিকায় অভিনয় করতেন! মঞ্জু ঘোষ তার বোন অঞ্জু ঘোষ ও কিশোর কুমারের “এক পলকে একটু দেখা” গানটি ডুয়েট করতেন।
নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের ১নং ব্লকের মহিষন্যাংড়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে এমনই এক পালা। শিবদুর্গা নাট্য সংস্থা প্রযোজিত ,মহাদেব হালদার রচিত ,তারক মণ্ডলের নির্দেশনা ও পরিচালিত ‘পাগলি মেয়ের সংসার’ ।
দলের অধিকাংশ শিল্পীরা বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত তবুও যাত্রাপালাকে বাঁচিয়ে রাখতে তাদের এই উদ্যোগ।
৬৭ বছর বয়সী গোবিন্দ রায় তিনি ল’-ক্লার্কস এর কাজ করেন তিনি জানান, সারাদিন অফিস সামলে ৪ মাস ধরে রাতের বেলা রিহার্সাল দিয়েছেন শুধুমাত্র যাত্রাপালা ভালোবাসার জন্যই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন বর্তমানে টিভি ‘র সিরিয়ালের প্রতি মানুষের ঝোঁকই যাত্রার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিল। নতুন প্রজন্মেরও খুব একটা আগ্রহ নেই “।