কিভাবে নেওয়া যায় অনাথ শিশুর দত্তক ? নিঃসন্তান দম্পতি অথবা এককভাবে অনাথ শিশুর দত্তক নেওয়ার সরকারি নিয়মই বা কি ? জানুন বিস্তারিত …

Social

মলয় দে, নদীয়া:- সম্প্রতি নদীয়ার শান্তিপুরে সদ্যোজাত উদ্ধার হওয়া দেড় মাসের শিশুর খবরের পরিপ্রেক্ষিতে , বহু নিঃসন্তান দম্পতির মনে সুপ্ত আশার সঞ্চার হয়েছিল তা পাওয়ার ব্যাপারে! অনেকেরই হয়তো নিয়ম নীতি সম্পর্কে জানা নেই সে কারণে, চাইল্ড লাইন থেকে আরপিএফ সংবাদমাধ্যম থেকে প্রশাসনিক ভবন একাধিক জায়গায় বিভিন্ন ফোন এসেছে সঠিক তথ্য জানার কারণে। তাই আজকে এই বিশেষ প্রতিবেদন।

ভারতবর্ষের বাচ্চা দত্তক নেওয়ার বিষয়টি CARA দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। একজন ভারতীয় শিশুকে একজন ভারতীয় নাগরিক বা অনাবাসী ভারতীয় দত্তক নিতে পারেন। জেলা শিশু রক্ষা ইউনিটের শিশুর বিবরণ এবং ছবি সহ জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে অথবা, দত্তক নেওয়ার আগ্রহে ঘরে বসেই www.cara.nic.in এই ওয়েব লিংকে আবেদন করতেই পারেন, এবং বিশদ জানার জন্য 03323212270 এই নাম্বারে ফোনও করতে পারেন।
তবে দত্তক নিতে গেলে যে যে বিষয় গুলি সম্ভাব্য পিতা-মাতার থাকার একান্ত দরকার তা হলো..

• সম্ভাব্য পিতা-মাতার শারিরীক আবেগীয় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা, বৈধ বিবাহের ন্যূনতম দু’বছর হওয়া বাধ্যতামূলক।

• প্রাণহানি হতে পারে এমন কোনো রোগে আক্রান্ত হলে আবেদন করতে পারবেন না।

•একক মহিলা যে কোন লিঙ্গের শিশুকে দত্তক নিতে পারলেও একজন একক পুরুষ কখনোই শিশুকন্যা দত্তক নিতে পারবেন না।
• দুইয়ের অধিক সন্তানের পিতা মাতা কখনোই আবেদনযোগ্য নন।

•একজন একক অভিভাবক কখনোই পঞ্চাশোর্ধ বয়স হলে চলবে না, তবে দম্পতির বয়সের সমষ্টি কখনোই ১১০ বছরের উর্ধ্বে হওয়া কাম্য নয়। এ বিষয়ে শূন্য থেকে তিন বছরের শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য দম্পতির বয়সের যোগফল ৬০ হতে হবে।

• এই সকল বিধিনিষেধের পর আবেদনের ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান প্লেসমেন্ট এজেন্সি RIPA এবং স্পেশাল এডপশন এজেন্সি SPA এ ধরনের সরকার মনোনীত সংস্থায় নিবন্ধীকরণ প্রয়োজন।

• রেজিস্ট্রেশন চার্জ বাবদ ৬ হাজার টাকা পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে সমস্ত প্রমাণাদি গৃহে উপস্থিত হয়ে তা যাচাই করে থাকেন ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা।

• আগ্রহী পিতা-মাতার চিকিৎসার কাগজপত্র খতিয়ে দেখে শিশুর সাথে কিছুক্ষণ কাটানোর সময় দেন তারা।

• আবেদনপত্র আইনের আধিকারিকের সামনে আদালতে শিশুসহ উপস্থিত হয়ে স্বাক্ষর করতে হয়, সেক্ষেত্রে ৪০০০০ টাকা জমা করতে হয় সরকারি তহবিলে।

• প্রি অ্যাডবশন ফস্টার কেয়ার সেন্টারে নার্সিং স্টাফদের থেকে শিশুর স্বভাব অভ্যাস এবং শারীরিক অবস্থা বুঝে নিতে হয়।
• আদালত বন্ধ ঘরে শিশুসহ পিতা-মাতাকে বিচারকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় এবং ওই শিশুর নামে সঞ্চিত অর্থের উল্লেখ করতে হয়।

• আদালতের নির্দেশ তৈরি করা এবং বিনিয়োগের রশিদটি দেখার পর চূড়ান্ত হয় দত্তক প্রক্রিয়া।

• এরপরেও চার মাসের মধ্যে দুবার ওই শিশুর নতুন মা বাবার পরিবার কেমন আছে তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় আধিকারিকরা পৌঁছান এবং সে বিষয়ে ৮০০০ টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়ে থাকেন।

অর্থাৎ মোট ৫৪০০০ টাকা ব্যয় করে সরকারি নিয়ম নীতি মেনে আপনি আইনি পিতা-মাতা হতে পারেন ওই অনাথ শিশুর। তবে কোনো ক্ষেত্রেই সদ্য উদ্ধার হওয়া শিশু পাওয়ার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না, তবে ধৈর্য রাখলে আগামীর উদ্ধার হওয়া কোনো শিশু কোল আলো করতে নিশ্চয়ই আসবে আপনার ঘরে।

Leave a Reply