মলয় দে, নদীয়া : নদীয়া জেলার শান্তিপুর শহরের অন্তর্গত বাগ আঁচড়া অঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রামী হেমন্ত সরকারের এই বাড়িতে এসেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু । বর্তমানে এই বাড়িটিতে হেমন্ত সরকারের পরিবার পরিজন থাকলেও এই ঐতিহাসিক বাড়িটির সংস্কার করার মত কেউ নেই , সরকারি তরফ থেকেও বাড়িটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ এই বাড়িটিতেই এক সময় এসেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম দূত ভারতের আপামর জনগণের নয়নের মণি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ।
বাড়িটির আশপাশ জঙ্গলে ভরে গেছে , প্রায় ব্রিটিশ আমল! কি তারও পূর্বে নির্মিত দ্বিতল বিশিষ্ট আবাসনটি প্রায় ধ্বংসের পথে । বাড়িটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সম্ভবত এটি চুন , সুঁড়কি ও করি, বড়গা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল । প্রাচীন আবাসনটিতে দেখা গেছে বড়ো বড়ো খিলান এবং বড়ো বড়ো জানালার খোপ । বর্তমানে বাড়িটি তে থাকে সাপ , বেজি , শেয়াল , ছুঁচো ইত্যাদি । যদিও তার কিছুটা আশপাশে মানুষের বসবাসও প্রত্যক্ষ করা যায় ।
সুভাষ চন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় পরিচয় হয়েছিল এই বাড়ির বাসিন্দা হেমন্ত কুমার সরকারের সাথে । হেমন্ত সরকার সুভাষ বসুর সহপাঠী ও একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন । ভারত পথিক গ্রন্থে সুভাষ চন্দ্র লিখেছিলেন ” আমি হেমন্ত কুমার সরকারের থেকেই রাজনৈতিক প্রেরণা লাভ করি । ”
সালটা ছিল ১৯১৩, সুভাষ চন্দ্র বসু শান্তিপুরে এই বাড়ির হেমন্ত সরকারের নেতৃত্বে তার কয়েক জন বন্ধুর সাথে মিলিত হন । তৎকালীন সময়ে বাগ আঁচড়া গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন আলিপুর বোমা মামলার আসামি নিরাপদ রায় । এই বিপ্লবী সাধক সেদিন সুভাষ চন্দ্র বসু ও হেমন্ত কুমার সরকার কে আশির্বাদ করে বলেছিলেন ” তারা যেন বড়ো হয়ে দেশের কাজ করেন এবং গ্রামকে না ভোলেন ” ।
হেমন্ত সরকারের অপর আরেকটি বাড়ি ছিল কৃষ্ণনগরে , সেখানেও সুভাষ চন্দ্র আসতেন । এই বাড়ির হেমন্ত কুমার সরকার কৃষ্ণনগর নেদের পাড়ায় একটি নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করলে সুভাষ চন্দ্র বসু সেখানেও ক্লাস নিতে আসতেন । সুভাষ চন্দ্র বসু , হেমন্ত কুমার সরকার ও তাদের অন্যান্য সঙ্গী সাথীরা কৃষ্ণনগরের খড়ে নদীর ধারে সমবেত হয়ে তৎকালীন রাজনীতি , ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করতেন ।
কৃষ্ণনগরের খোড়ে নদীতেই সুভাষ চন্দ্র বসু সাঁতার শিখেছিলেন । মাত্র ষোলো বছর বয়োসে সুভাষ চন্দ্র বসু প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভ ও আধ্যাতিকতার উদ্দেশ্যে শান্তিপুরের গঙ্গার ধারে মহাভারত পোদ্দারদের একটি পরিত্যক্ত দ্বিতল বাড়িতে বসবাস শুরু করেছিলেন তার বন্ধু বান্ধবদের সাথে । বর্তমানের এই অঞ্চলটি বল খেলার মাঠ বা স্পোর্টিং ইউনিয়নের মাঠ বলে পরিচিত ।
ছাত্রাবস্থায় নদীয়ার সাথে সুভাষ চন্দ্র বসুর যে যোগাযোগ গড়ে ওঠে সেটা তার কর্ম জীবনেও অক্ষুণ্ণ ছিল । সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস থেকে বহু বার নদীয়ায় এসেছিলেন বলেই জানা যায় । শান্তিপুর , কৃষ্ণনগর ও নবদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক সভা সমাবেশে তার উপস্থিত থাকার ও ভাষণ দেবার ইতিহাস মিলেছে । এই সমস্ত অঞ্চলগুলো থেকে তাকে সম্বর্ধনা ও দেওয়া হয়েছে ।
সুভাষ চন্দ্র বসু নদীয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সর্বদায় যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এমনকি নদীয়ার বিপ্লবীদের সশস্ত্র গুপ্ত আন্দোলনের পথ প্রদর্শক ছিলেন বাঘ যতীন এবং সুভাষ চন্দ্র বসু ।
ছবি: সংগৃহীত।