মলয় দে,নদীয়া : শুরু হলো আদিবাসী সম্প্রদায়ের টুসু উৎসব । আদিবাসীদের মতে টুসু লৌকিক দেবী , তাকে কুমারী হিসাবে কল্পনা করে পূজা অর্চনা করা হয় । সেই কারণেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা যারা মূলত কুমারী নারী তারাই উক্ত অনুষ্ঠান নিয়ে মেতে ওঠেন । এই পুজো অগ্রহায়ন মাসের সংক্রান্তি থেকে শুরু করে পৌষ সংক্রান্তিতে পূজার সমাপন ঘটে ।অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিন গ্রামের কুমারী মেয়েরা একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো লাগিয়ে তাতে তুষ, নতুন আমন ধান , গোবরের মন্ড, দূর্বা ঘাস , আতপ চাল , পুষ্প মাল্য সহ একটি পাত্র বা জলচৌকির ওপর স্থাপন করে পুজো অর্চনা করার রীতি রয়েছে ।
পৌষ মাসের প্রতি সন্ধ্যা বেলা আদিবাসী সম্প্রদায়ের কুমারী মেয়েরা এই পূজার আরাধনা করে থাকেন ; সেটাই টুসু পুজো বা টুসু উৎসব নামে সুপরিচিত ।
নদীয়া জেলার শান্তিপুর রামনগর চর পুরাতন পাড়ায় উৎপল মাহাতোর বাড়ি আমরা এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের টুসু পুজো প্রত্যক্ষ করা গেল।
তাঁরা বলেন “আজ আঘন সাঁকরাইত,আদিবাসীদের সবথেক্যে বড় পরব টুসুর আনুষ্ঠানিক সূচনা।মাঈ মসি পিসি কাকী খুড়ী দিদি বহিনেরা সব সিনান কইরে মাটির সরায় গুঁড়ি,সিঁদূর,কাজল লেপ্যে,বাঁদুফুল,ধান- দুব্বা,গেঁদাফুল,সরষ্যা ফুল, কাঁইচ বীচ, গোবর ঢেলা রাখ্যে কুলুঙ্গিতে নাহল্যে ফুলপিঁঢ়ার কাছে সের-পাই,ধান,গোবর,কাঁইচ বীচ তুপ্যে ‘টুসু পাতা’বেক।গটা পোষমাস জুইড়ে চলব্যেক টুসুর গীত।সন্ধ্যা বেলি কুলহি কুলহি গেলেই শুনত্যে পাবে– ” উঠ উঠ উঠ টুসু,উঠ করাতে আস্যেছি–।” তারপর একমাস টুসুর সঙে নিজেদেরই সুখ-দুঃখের কথা ভাগ কইরে লিয়া। শেঁষে মকর দিনের দুপহরে টুসুকে বিদায় দিঁয়ে শ্বশুরঘর পাঠানো”।
‘টুসুপাতা’র দিনে এই গানটা,,,,,
আস্য টুসু বস্য গো ঘরে।
আমরা আছি তুমার আশ কইরে।।
সুখ দুঃখের কথা বল,
কেমন ছিলে শ্বশুরঘরে।
একটি বছর দেখি নাই গো,
দেখব্য ইবার মন ভইরে।।
ফুলে মালায় সাজাব গো,
টুসুকে যতন কইরে।
টুসুর সঙে বলব্য কথা,
যা আছে গো অন্তরে।।
আদরে যতনে টুসু,
রাখব্য একমাস ধইরে।
সুশান্ত বলে বিদায় দিব,
একেবারেই মকরে।