মলয় দে, নদীয়া:- শান্তিপুরের প্রাচীন বর্ধিষ্ণু অঞ্চল ব্রাহ্মশাসন । একদা এই অঞ্চল ছিলো ১০৮ ঘর ব্রাহ্মণদের আবাসস্থল । সেই অঞ্চলেই পূজিত হোন বাঁশতলা মা কালী ।
কিভাবে এই কালী পূজার সূচনা হলো তা নিয়ে রয়েছে গল্পগাঁথা । ইতিহাসের সঙ্গে মিল না থাকলেও এই পুজোর ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয় । কথিত আছে বর্তমানে যেখানে মা পূজিত হোন সেখানে ছিলো বাঁশ বাগান । সেই বাঁশ তলায় কোনো এক পরন্ত বিকেলে একদল ক্ষুদে বালক পুজো পুজো খেলছিলো , ছিলো পুজোর নানা রকম উপকরণ । টিন কে তারা ঢাক হিসেবে , বালি কে নৈবেদ্য করে , তাদেরই মধ্যে কেউ পুরোহিত সেজে ঠাকুর পুজোয় মেতেছিল । এই খেলার মধ্যেই হটাৎ দেবী বালক গণের মধ্যে সত্যি করেই দেখা দেন । এতে বালক গণ স্তম্ভিত এবং ভীত হয়ে সেখান থেকে দৌড়ে চলে এসে বাড়িতে সব জানান । পরে বাড়ির বড়োরা সেখানে অমাবস্যা তিথিতে কালীপুজো ই মা এর পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন । বাঁশতলা থাকায় ধরে নেওয়া হয় এর জন্যই মা এর নাম হয়ে যায় বাঁশ তলা মা কালি ।
প্রাথমিক ভাবে এখানকার মা পূজিত হতেন নিশি রাতে । কিন্তু এই পুজো শুরু হওয়ার কয়েক বছর পর ওই পুজো যে করতেন সেই ব্রাহ্মণ নাকি সুত্রাগড়ে আর একটি পুজো ধরেন । ফলে ব্রাহ্ম শাসনের পুজটিকে সন্ধ্যে বেলায় করে সূত্রাগড়ের পুজোটি করতে রহনা দেন ।পথ মধ্যে এক তেতুঁল গাছ তলায় দুটি তির নাকি ঐ ব্রাহ্মণের পথ রুদ্ধ করে দেয় । দেবী সেখানে আবির্ভূত হয়ে ব্রাহ্মণ কে আবার নিশি পুজো করতে বলেন । ব্রাহ্মণ সেখানেই নিশিপুজো করেন । দেবী এই ঘটনা অন্য কাউকে বলতে উক্ত ব্রাহ্মণ কে নিষেধ করেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে ঐ ব্রাহ্মণ এই অলৌকিক ঘটনা ব্রাহ্ম শাসনে এসে কয়েকজনকে বললে তিনি নাকি তৎক্ষণাৎ মারা যান । এরপর সেখানকার ব্রাহ্মণরা নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের মৃত্যুতে মর্মাহত হয়ে দেবীর পাট গঙ্গায় ভাসিয়ে দেন ।
পরবর্তীতে এখানকার মুখার্জী পরিবারের এক গৃহবধূকে মা স্বপ্নে দেখা দেন । ওই গৃহবধূ তখন মা কে জানান যতদিন তাদের পরিবারের কাঁধে উপবিতা থাকবে ততদিন তারা মা এর পুজো করে চলবে । সেই অনুযায়ী আজও এই পুজো চলে আসছে ।এই জাগ্রতা মা এর ছাদের তলায় থাকার পক্ষপাতী নয় । এখানকার মন্দির নির্মাণ নিয়েও নানা কথা প্রচলিত আছে ।
পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও নানা কারণে তা ভেস্তে যায় । দেবী স্বপ্নে জানান আমি মন্দিরে রুদ্ধ হতে চাইনা, খোলা জায়গাতেই আমার পুজো করা হোক । সেই থেকেই দক্ষিণা কালী মাতা খোলা জায়গাতেই পূজিত হয়ে আসছেন । প্রতি কালী পুজোর রাতে এই নির্জন স্থানে জন সমাগমে ভরে ওঠে । এখন ও এখানে ছাগ বলির রীতি চলে আসছে ।