মলয় দে, নদীয়া:- সিন্ধু সভ্যতায় বেণু ও বীণা ও মৃদঙ্গের ব্যবহার প্রচলিত ছিল বলেই মনে করেন প্রত্নতাত্ত্বিকগণ। বিভিন্ন উপহার চিত্র এবং মাটি খুঁড়ে সে ধরণেরই প্রমাণ পান। গঠনগত উপাদান গত দিক থেকে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সমূহ “তত” অর্থাৎ তারযুক্ত, “শুষি” অর্থাৎ ফুঁ দিয়ে বাজানো, “ঘন” অর্থাৎ ধাতুনির্মিত, “আনন্ধ” অর্থাৎ চামড়ার আচ্ছাদনে নির্মিত মূলত এই কয় প্রকার বাজনাই সারা বিশ্বজুড়ে । মৃদঙ্গ, ডুগ ডুগি, তবলা, খোল, ঢোলক, কঙ্গো , ঢাক, চড়বড়ি, ড্রাম এ ধরনের বাদ্যযন্ত্র দু মাথা চামড়ার আচ্ছাদন থাকে, মাঝের ফাঁপা অংশটি পোড়ামাটি, কাঠ, অথবা ধাতু দ্বারা নির্মিত , যার বাইরে চামড়ার ফ্রিতে টান বা ঢিল করে স্কেল বজায় রাখা হয়। কীর্তন গান মনিপুরী নৃত্যে শ্রী খোলের ব্যবহার দেখা যায়। মধ্যযুগে চন্ডী রত্নাকর কাব্যে শ্রীচৈতন্যর সম্পত্তি বলা হয়েছে। তবে খোল মাটির তৈরি আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়! আর সেই কারণেই মৃৎ +অঙ্গ অর্থাৎ “মৃদঙ্গ”।
এই সনাতনী বাদ্যযন্ত্রের ধারাবাহিকতা আজও বাংলায় সমাদৃত। শহরাঞ্চলে শ্রীখোল লুপ্তপ্রায় হলেও রামগঞ্জে আজও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন শিল্পীরা। বর্ধমান জেলার হরে কৃষ্ণ হালদার, বর্তমান হুগলি জেলার নিবাসী। তার স্ত্রী পার্বতী হালদার, দুই কন্যা প্রিয়াঙ্কা এবং রঞ্জিতা কে নিয়ে শ্রীখোলের মধুর বোল তাল নিয়ে ছুটে চলেছেন, সারাদেশ সহ বিশ্বের মাঝে। বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কা ইংরেজিতে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, ছোট মেয়ে রঞ্জিতা মিউজিকের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কিন্তু বাবার ইচ্ছা পূরণে, পুরো পরিবার নিয়মিত রেওয়াজে ক্রমশই জেলা কয়টি রাজ্যে অবশেষে বিশ্বের মাঝে সুনাম অর্জন করছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় পুরো পরিবার শুধু শ্রীখোল নয়! পরিবর্তন এবং কিবোর্ডেও পারদর্শী যথেষ্ট। এ ব্যাপারে হরেকৃষ্ণ বাবু বলেন, তার পিতা-মাতা শশুর শাশুড়ির কাছ থেকে অনেকটাই শিখেছেন! বেশকিছু সদ্গুরুর সান্নিধ্য পেয়েছেন জীবনে! তাতে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রচার প্রসার বাড়লেও থিওরিটিক্যাল বিভিন্ন তথ্যগত উপাদানের খোঁজে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকের ভূমিকায় কাজ করছেন আজ ১৩ বছর ধরে। মৃদঙ্গ আশ্রম, শ্রীখোল অ্যাক্যাডেমি নানান সংস্থা তৈরি করেছেন আগামী প্রজন্মের যোগ্য শিষ্য তৈরি করার উদ্দেশ্যে । অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং টিভিতে প্রথম তার প্রতিভা তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে। আজও তিনি সপরিবারে অনুষ্ঠান করতে ছুটে চলেছেন দেশ দেশান্তের সনাতনী ধারা কে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে। সেখানেই তার শ্রীখোলেরর বোল আজও খোঁজে আগামীর যোগ্যউত্তরসূরী।