চাকা গড়ালো রেললাইনে, প্রায় যাত্রীর সংখ্যা কম সকালের দিকের ট্রেনগুলি! সিঁদুরে মেঘ দেখছেন হকাররা

Social

মলয় দে, নদীয়া :-অন্ধকার কাটতে না কাটতেই, কারশেড থেকে এক নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেন আসার হুইসেলের শব্দ শীতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে পৌঁছেছিল স্টেশন থেকে অনেক দূরে, সময়টা তখন ভোর তিনটে বাইশ। ট্রেনের বাইরে কর্তব্যরত প্লাটফর্মে পশ্চিমবঙ্গ রেল পুলিশ এবং আরপিএফের সংখ্যা প্রায় যাত্রী সংখ্যা সমান। যাত্রীদের বেশিরভাগই দূরের পথ শিয়ালদহ পৌঁছতে হবে, তাই ট্রেনের সিটে বসেই চাদর মুড়ি দিয়ে অসমাপ্ত, ঘুম সমাপ্ত করার প্রয়াস দেখা গেলো। ভ্যান্ডার কম্পার্টমেন্টে চওড়া বাঙ্কের উপরে ভ্যান্ডারীর তখন প্রায় মাঝ রাত! ট্রেন ছাড়া চাক্ষুষ করে আবার চাদরের তলায় মুখ ঢাকলেন ঘণ্টা তিনেকের জন্য।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই পরবর্তী ট্রেন ৫:২২ এর যাত্রী সংখ্যাটা বাড়লেও পুরো ট্রেনের যাত্রীদের দুটো কম্পার্টমেন্টে বসালেও দূরত্ব বিধি লঙ্ঘিত হবে না বলেই মনে হলো। এরপর ৭.২৮ অর্থাৎ ডেইলি প্যাসেঞ্জার অফিস যাত্রীদের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। যেখানে দাস বাবু, ব্যানার্জি দা, মুখার্জি কাকুরা দেশলাই চিরুনি জলের, বোতল ,ব্যাগ, রুমালের মতো নানা উপকরণ দিয়ে পরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে ওঠা প্রিয় সহযাত্রীবন্ধুদের জন্য জায়গা রাখতেন! এবং তা নিয়ে বচসা লেগেই থাকত। আজ কিন্তু অবশ্য জায়গা দখলের লড়াই দেখা গেলো না। প্ল্যাটফর্ম এর উপরে চা বা অন্যান্য দোকান খোলা নেই তাই হয়তো গত কালকের নিউজ আপডেট নিয়ে অথবা, খেলা ,রাজনীতি বা স্থানীয় কোন ছোট্ট ঘটনা নিয়ে ট্রেন ছাড়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মজলিস দেখা গেলো না। তবে ট্রেন ছাড়ার কিছু সময় আগে প্রস্রাবাগারে লাইন, কোনরকমে টিকিট কেটে শেষ মুহূর্তে দৌড়ে ট্রেন ধরা প্যাসেঞ্জার এবং কয়েক মুহুর্তের জন্য ট্রেন মিস করা যাত্রীদের চোখে পড়ল পূর্বের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই।

খবরের কাগজ বিক্রেতা যথারীতি অত্যাবশ্যকীয় জরুরী পরিষেবার গর্বে খাঁকি পোশাকের সামনে মেরুদন্ড সোজা করেই বিক্রি করছিলেন কাগজ।
কল্যাণী বা কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যেতে ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ভাড়া করে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের বেশ কিছু অসুস্থ রূগীর বাড়ির পরিবারের বেশ খানিকটা সময় সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানান। অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এতদিন অনলাইনে বুকিং করানো এবং তা কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছানোর জন্য ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে শিপিং চার্জ বেশি দিতে হতো, তাদের অনুমান এবার থেকে ট্রান্সপোর্টে মাল পৌঁছানোর জন্য দোকান ভরে উঠবে বিভিন্ন বিক্রিত দ্রব্যের সমাহারে। তবে অফিস যাত্রী ডেইলি প্যাসেঞ্জাররা জানান দীর্ঘদিন অনিয়মিত জীবন যাপনে অভ্যাসগত পরিবর্তন হয়েছে মানসিক এবং শারীরিক ক্ষেত্রে! তাই এই জ্বরা কাটিয়ে উঠতে কিছুদিন সময় লাগবে। তবে বিভিন্ন হকারদের দেখা মিলল না! সময় সাপেক্ষে সকলে সব রকম অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক’ হলেও! তাদের উপরে রেল কর্তৃপক্ষ অমানবিক হবে সে বিষয়ে আভাস পেয়েছিল পূর্বেই! তবুও আজকের সারাদিনের বিভিন্ন ঘটনার উপর নির্ভর করবে আগামীর আন্দোলন । তবে স্টেশনের ওপর দীর্ঘদিন দোকানদারি করে আসা দোকানিরা আজকেই তাদের দোকান খুলবেন সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তাদের কথা অনুযায়ী বাধা আসলে বাঁধবে বিরোধ , সংগঠিত গণ আন্দোলন গড়ে উঠবে।

Leave a Reply