গোঁসাঘর

Social

বিকাশ চক্রবর্তী : পুরোনো বাড়িটা ভাঙা হচ্ছে। নতুন বাড়ি হবে। বড় রাস্তার মোড়ে লরি করে ইট এল আজ।

বাসাবদলের কী ঝক্কি! একটা একটা করে মালপত্র বাসাবাড়িতে নিয়ে, আবার নতুন করে সাজানো, কী ক্লান্তিকর কাজ!
তারমধ্যে আলমাড়িটা ভ্যানে তুলতে গিয়ে এক কোণায় তুবরে, গেল। মা গেল রেগে।
বাবা বলল, খাটের পালিশ উঠে গেছে। পালিশ করতে হবে।
বুঝলাম, আলমাড়ি, খাট সব নতুন মোড়কে সাজানো হবে।
যে মিস্ত্রি কাজ করবে, বলে গেছে, সাতদিনের মধ্যে “লেবার” দিয়ে “পুরোনো ঘর”টাকে “ফুরোনো ঘরে” পরিবর্তন করতে হবে।
ঘর ভাঙা শুরু হয়েছে, দুদিন হলো। বারান্দায় এখনো গোবরের দাগটা রয়ে গেছে। বোনের বিয়ের সময়ে লাগানো হয়েছিল। কত বছর হয়ে গেছে বোন “অন্য” ঘরে, অথচ, বিয়ের চিহ্নটা রয়ে গেছে। সেটাও ভাঙা হয়ে গেল।
যখন মাধ্যমিক দেব, তখন পাশেই একটা ছোট্ট ঘর বানিয়ে দিয়েছিল বাবা। রাতজেগে পড়তাম। জানলা দিয়ে পেয়ারা গাছটা দেখতাম। দুপুরবেলায় একটা চড়াই এসে বসত।

পেয়ারা গাছটাও কাটা হলো। এবারে অনেক পেয়ারা হয়েছিল। পেয়ারা গাছটাও বুঝি বুঝতে পেরেছিল।

ছোট্টঘরে আমিই রাজা ছিলাম! মাধ্যমিকের পর কত সুখস্বপ্নের স্মৃতি ঘরটাতে। ঘরের কথাটেই মনে পড়ল, তোমার কথা!
তখন বহরমপুরে যেতাম! ITI কলেজে। ওখানেই তোমার সাথে আলাপ। তুমি বহরমপুরে থাকতে, আমি রাণাঘাটে। স্কুটি নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে, আমার জন্যে।
একদিন ট্রেন লেট করলো, তবুও তুমি দাঁড়িয়েছিলে। ক্লাসের লেট হয়ে গেছিল, তুমি বলেছিলে, চল হাজারদুয়ারী যায়। পকেটের অবস্থা তখন ভালো থাকত না, প্রথমে রাজী হয়নি, তুমি জোর করেছিলে।

গিয়েছিলাম, কিন্তু রাগ হয়েছিল। তুমি হেসে বলেছিলে, “গোঁসা হয়েছে? জানো তো, রাজাদের গোঁসাঘর থাকে, হাজারদুয়ারীতেও আছে।”
তখন হাজারদুয়ারী প্যালেস থেকে বেরিয়ে এসেছি, তাই তোমার কথা যাচাই করা হয় নি।

আমার আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ড। ফলে ডিপ্লোমা কোর্সটা টানতে পারলাম না। বহরমপুর যাওয়া বন্ধ হল। তোমার সাথে কথা বলাটাও বন্ধ হয়ে গেল। সেদিন খুব “গোঁসা” হয়েছিল। আমার ছোট্ট ঘরটাতে বসেছিলাম অনেকক্ষণ।
সেই “গোঁসাঘর”টাও ভাঙা হয়ে গেল। বিকেলে লেবারকে টাকা দিতে এসে, ভাঙা ঘরে দাঁড়ালাম, তোমার কথা ভাবলাম, কিন্তু দেখলাম রাগটা আর নেই। “গোঁসাঘর” ভাঙার সাথে সাথে, পুরনো রাগটাও গেছে মরে।
পেয়ারা গাছটা নেই, তাই চড়াই পাখিটাও আসে নি। শুধু ‘মিউ মিউ’ করে, বেড়ালটা গাঁ ঘেসে এসে দাঁড়ালো। বিড়ালটাকে ভাড়াবাড়ির ঠিকানাটা দেওয়া হয় নি।
নিজের বাড়ির ঠিকানাটা খুঁজে পাওয়া আমাদের একজীবনে হয়ে উঠে না!

Facebook: News Social Barta 24×7