মলয় দে, নদীয়া:- নদীয়ার শান্তিপুর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ড বিবাদী নগরের পিংকু রায় বাবাকে হারিয়েছে ছোটবেলায়! মা অসংগঠিত শ্রমিকের ভবিষ্যৎ নিধি প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মী। অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে মানুষ হওয়া পিংকু পড়াশোনা করার ফাঁকেই মায়ের কষ্ট লাঘবের জন্য শিখে রেখেছিলো ড্রাইভিং বর্তমানে ওই পেশাতেই সন্তুষ্ট সে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী মায়ের সম্মতি ক্রমে গতবছর বিবাহ করে শান্তিপুরেরই তার বান্ধবী পূজা কুন্ডু কে। দুজনেই মরণোত্তর চক্ষুদানের প্রচার প্রসার এবং সংগ্রহের যোগাযোগকারী “শান্তিপুর মরমী” সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। প্রথমে আবেগের সাথে এই ধরনের সমাজ সেবায় অংশগ্রহণ করলেও, কাজটা যে অতটা সহজ নয় তা এক বছরের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল ওই দম্পতি।
তাদের কথা অনুযায়ী অনেক নিকট আত্মীয়, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এমনকি ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা প্রতিবেশী একাজে বাহবা জানালেও পরিবারের প্রবীণ সদস্যের মৃত্যুরপর চক্ষুদানের প্রস্তাবে নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। এমনকি অতিবড় সমাজসেবী বিজ্ঞানকর্মীও একে অন্যের উপরে দোষারোপ করে বিষয়টি লঘু করতে চেষ্টা করেন। ক্ষোভে দুঃখে লজ্জায় হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে ওই দম্পতি। অবশেষে শুক্রবার তাদের বিবাহ বার্ষিকীতে নিমন্ত্রিত সকলের জন্য বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধির নানা পোস্টারের সাথে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়া চক্ষুদানের পেপার কাটিং বিরাট বড় হোডিং হিসেবে সকলের দৃষ্টিগোচরের উদ্দেশ্যে রাখা ছিলো। আতিথিয়তা সাথে, খাওয়ার টেবিলে তদারকির শেষে একটাই অনুরোধ “বিষয়টি ভেবে দেখবেন!” অর্থাৎ দাম্পত্য জীবন সুখের হোক এই আশীর্বাদ নয় ! মৃত্যুর পর দুটি কর্নিয়া নষ্ট না করে দুটি কর্নিয়া প্রদানের মাধ্যমে দুজন দৃষ্টিহীন মানুষকে পৃথিবীর আলো দেখানোর মতো মহৎ সিদ্ধান্তে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে আমাদের পাশে থাকুন। শ্রী চৈতন্য দেবের বিখ্যাত উক্তি “আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও” আত্মউপলব্ধি করেই হয়তো প্রথমবিবাহ বার্ষিকীতে মরণোত্তর চক্ষুদানের মাধ্যমে নবদম্পতির এই অভিনব আয়োজন।