অঞ্জন শুকুল, নদীয়া: নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের পাবা খালিতে পৈতৃক ভিটা চিকিৎসা বিজ্ঞানী প্রীতম শুকুলের। যখন সারা বিশ্ব করোনা সমস্যায় জর্জরিত ঠিক তখনই করোনা প্রতিরোধে ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন নদীয়ার যুবক বাঙালি চিকিৎসক বিজ্ঞানী প্রীতম শুকুল। ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন বিষয়ক পরামর্শদাতা প্যানেলের সদস্যও এই বাঙালি বিজ্ঞানী।
নদীয়ার শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান শ্রীধাম নবদ্বীপে তার জন্ম হয় । ছেলেবেলায় বেসরকারি ইংরাজি বিদ্যালয়ে শুরু হয় পড়াশুনা। পরে নবদ্বীপ বকুলতলা হাই স্কুলে পড়াশুনা। অত্যন্ত মেধাবী ও দুরন্ত ছাত্র হিসেবে পরিচিত। নবদ্বীপের গন্ডি পেরিয়ে ২০০৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ।২০১৭ সালে গবেষণার ফলস্বরূপ ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেটে মেডিসিন সাইন্স (ডিএসসি ) উপাধি অর্জন করেন ।
মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি পরিচিতি। সদা হাস্যময় মিস্টিভাষী সকলের অতিপ্রিয় হওয়ার কারণে নিমেষে সকলকে আপন করে নিতে পারে বলে তাকে নিয়ে গর্ব অনুভব করেন প্রতিবেশীরা। একান্নবর্তী পরিবারের একমাত্র সন্তান যদিও ঠাকুর দা স্বর্গীয় শ্রী মন্মথ নাথ শুকুল ও ঠাকুরমা স্বর্গীয় শ্রীমতি রানী শুকুল এর তত্ত্বাবধানে ও আদর্শে বেড়ে ওঠা। বাবা বরুণ শুকুল স্থানীয় একটি ব্যাবসায় যুক্ত। মা কণিকা শুকুল গৃহকর্ত্রী ।
সাত বছর ধরে চলছে জার্মানে অধ্যাবসায়, বাবা মার একমাত্র সন্তান। ডাক নাম বান্টি । ভালো নাম প্রীতম শুকুল। নবদ্বীপে ছোট্ট বাড়িতে বসবাস। এখান থেকেই তার বড় হওয়া। মায়ের হাতে রান্না খেয়ে তার তৃপ্তি। অভ্যাস প্রতিদিন রুটিন করে মা-বাবার সাথে ফোনে কথা বলা।আমি নিজেও নদীয়ার ছেলে বলে কাঁপা কাঁপা হাতে নম্বরটা ডায়াল করেই ফেললাম। নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম করোনা থেকে কি সারাবিশ্ব আদৌ মুক্তি পাবে? ওপার থেকে জবাব এলো ‘উত্তর জানা নেই’। তবে সারা বিশ্বে করোনা প্রতিরোধক তৈরীর চেষ্টা চলছে। আমরা নিশ্চিত সাফল্য আসবেই’।
তিনি জানান উপসর্গহীন আক্রান্ত অর্থাৎ যাদের চিহ্নিত করতে ভারত সরকারও হিমশিম খাচ্ছে তাদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। পাশাপাশি আরও জানান’ এক্সিলেন্ট বায়ো মার্কার অ্যানালিসিস করে এমন রোগীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের শরীরে জড়িয়ে প্রক্রিয়ার ফলে তৈরি হয় জৈব পদার্থ। সেগুলি ফুসফুসের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। তারই ঘনত্বের পরিবর্তন বিচার করে সংক্রমনের গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা চলছে। ইউরোপের আটটি দেশ এই গবেষণায় শামিল। আমি তার প্রধান বিজ্ঞানী’।
প্রথমস্তরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পরবর্তী স্তরে ভারত তথা রাজ্যের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থাকে ও হাসপাতালকেও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন । সর্বভারতীয় স্তরে এই কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ।এই বিষয়ে কেন্দ্রের পাশাপাশি আমাদের রাজ্য সরকারের সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে যোগাযোগ করবেন তিনি। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে । তাদের প্রাথমিক গবেষনার ফলাফল জিজ্ঞাসা করতেই জানান ইতি মধ্যে দেশ ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রেস একই সঙ্গে এই প্রশ্ন নিয়ে যোগাযোগ করেছে। স্বাভাবিক ভাবে কেও কোনো উত্তর পাইনি, পাবেও না। ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট ও কনফিডেনশিয়াল এগ্রিমেন্ট এর কারণে । সমস্ত ফলাফল সঠিক সময়ে নামি আন্তর্জাতিক রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত করা হবে এবং প্রেস বিবৃতি দেওয়া হবে এ জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের দেশের কথা জিগ্যেস করতেই বলেন না ভারতের কোভিডি যুধ্যে প্রেক্ষাপট তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে একটি পজিশন পেপার আর্টিকেল রূপে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশ করা হবে। ইতি মধ্যে ভারত সরকার এই কাজ শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন গভর্নিং বডি ও সেন্ট্রাল রিসার্স অর্গানাইজেশন সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সব তথাবধান করছেন ডাক্তার শুকুল নিজেই।
মৃত্যুর হার অধিক এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানান ” অযথা এত উত্তেজিত হবেন না। মৃত্যুর হার বহু প্যারামিটারের ওপর নির্ভর করে । পরীক্ষার সংখ্যা, পসিটিভ কেস এর সংখ্যা, কমিউনিটি ইত্যাদি। তিনি বলেন যে কভিডের ফলে মৃত্যু আর কভিডের সাথে মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য আছে । আমাদের রাজ্য এখানে যেহেতু দুই সংখ্যাকে একসঙ্গে প্রকাশ করছে তাই আমি এই পদক্ষেপের সাধুবাদ জানাই। এরফলে পজিটিভ কেস এবং ভাইরাসটিই বুঝতে সুবিধা
হবে বিজ্ঞানীদের।
তবে এ কাজে মানুষকে ধৈর্য ধরার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন আমাদের নিজেদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবের জন্য। খুব প্রয়োজনে বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক পড়তে, এবং সর্বোপরি পুলিশ ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সামনে খারাপ ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেন। তিনি জানান, তারা ২৪ ঘন্টা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পরিষেবা দিচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোথাও শোনা যাচ্ছে ডাক্তার এবং নার্সদের কে ডিউটির পর নিজেদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে, এই ঘটনা সভ্য সমাজে কখনোই কাম্য নয়। একবার ভেবে দেখেছেন যদি ডাক্তার বা পুলিশ একদিনের জন্য বসে যায় কোন কাজ না করে তাহলে আমাদের কি হবে। প্রত্যেকের জানা উচিত এড়াও আমাদের পরিবারের সদস্য। পাশপাশি তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান আমরা দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চেষ্টা চালাচ্ছি এই মরণ ভাইরাস থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর প্রতিষেধক আবিষ্কার করার জন্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা লক্ষ্যে পৌছাব।
সারা বাংলা তাকিয়ে আছে তাদের ঘরের ছেলে প্রিয় বিজ্ঞানীর সাফল্যের দিকে।