সোশ্যাল বার্তা ,ওয়েব ডেস্ক : রিমি খোন্দকারের জন্ম বাংলাদেশের ফেনীর সোনাগাজী উপজে’লায়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন ফেনীতেই। ফেনী জিয়া মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় আসেন। এরপর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। পাশাপাশি হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা। তাতে সফলও হয়েছেন তিনি। শুনুন তার সফলতার গল্প …
• উদ্যোক্তা জীবনের শুরু: অনেকদিন থেকেই পড়াশোনা করছিলেন ই-কমা’র্স নিয়ে। তারপর সিদ্ধান্ত নেন দেশীয় বিভিন্ন শাড়ি নিয়ে কাজ করবেন। এরই মধ্যে শুরু হলো ক’রো’না আর লকডাউন, পুরো প্ল্যান ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম। অন্যদিকে তার এবং তার পরিবারের আশেপাশের সবার অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয়। তবে কিছু এলাকার তাঁতির সাথে আগেই যোগাযোগ ছিল তার। তাছাড়া হাতে ছিল ২০ হাজার টাকা। ঝুঁ’কি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পুরো টাকা দিয়েই শাড়ি কিনে ফেলেন। সেই তো শুরু।
• গো’লাপজানের যাত্রা শুরু: করোনায় অর্থনৈতিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে স্বচ্ছলতা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য একটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবেন। তিনি শুধু ব্যবসা করতে চাননি, ব্যবসার লভ্যাংশ দিয়ে আশেপাশের সবার উপকার করতে চেয়েছেন। তাই ১ মে ফেসবুক পেজ ‘গো’লাপজান’র যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে ভেবেছিলেন গো’লাপজানে শুধু শাড়ি রাখবেন। ইতোমধ্যে খবর পেলেন, পাবনার এক তাঁতির আর্থিক অবস্থা খুবই খা’রাপ। তার ঘরে খাবার নেই, কিন্তু লু’ঙ্গি আছে। রিমি ভাবলেন, তার থেকে কিছু লু’ঙ্গি কিনে নিলে তার উপকার হবে। লু’ঙ্গিগু’লো আনার একদিনের মা’থায় সব বিক্রি হয়ে যায়।
রিমি চেয়েছিলেন পুরোনো ধাঁচের একটি ইউনিক নাম। অবশ্যই তা বাংলা ‘হতে হবে। তাই গো’লাপজান নামটি বেছে নিয়েছিলেন। আমা’দের দাদি-নানিদের নামকে স্ম’রণ করার জন্য। আর দাদি-নানিরা সব সময় শাড়ি পরতেন। এটাও একটি কারণ। গো’লাপজানের স্লোগান, ‘পোশাকে ফুটে উঠুক আপনার ব্যক্তিত্ব।’
• পুঁজি: ২০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করে ২ মাসে তার বিক্রি প্রায় আড়াই লাখ টাকা। পরে আরও কিছু টাকা যোগ করেছেন পুঁজির জন্য। তিনি একটি প্রোডাক্ট বিক্রি করে সেই টাকা আবার বিনিয়োগ করেছেন। এভাবেই বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন।
• কেন উদ্যোক্তা হলেন: গতানুগতিক ধা’রার চাকরিতে না গিয়ে কেন উদ্যোক্তা হলেন? এই প্রশ্নের জবাবে রিমি বলেন, ‘আসলে আমি চেয়েছি স্বাধীনভাবে কিছু করতে। ধ’রা-বাঁ’ধা, যেটাতে নিজে কিছু করার সুযোগ নেই- এমন কিছু করতে চাইনি। আর এতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন ‘উই’য়ের রাজীব ভাইয়া এবং নিশা আপু। তাদের দেখে উদ্যোক্তা ‘হতে সাহস পেয়েছি।’
•ফেনীতে পরিচিতি: রিমি ফেনীর উদ্যোক্তা ও ফেসবুক কমিউনিটির মাঝে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে পেরেছেন। তিনি ঢাকায় বসে কাজ করলেও সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় ফেনীতে। তাই নিজেকে ফেনীর মে’য়ে, ফেনীর উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন।
• পারিবারিক সম’র্থন: ব্যবসা শুরু করার পর সবার সাহায্য পেয়েছেন। রিমির স্বামী মাইনুল ইস’লাম অনেক বেশি সম’র্থন করেছেন। তা ছাড়া ভাই-বোনরা পুঁজি দিয়ে, শ্বশুরবাড়ি থেকেও প্রোডাক্ট কিনে তাকে উৎসাহ দিয়েছে। তিনিও কিছু প্রোডাক্ট আত্মীয়দের গিফট করেছেন। আশেপাশের কিছু মানুষকে অল্প পরিমাণে সাহায্য করেছেন।
•লাখপতি হওয়ার গল্প: ‘উই’তে লাখ টাকার সেল হয় গত ৮ জুলাই পর্যন্ত। তিনি কাজ করেছেন সম্পূর্ণ দেশীয় পণ্য শাড়ি, লু’ঙ্গি ও থ্রি-পিস নিয়ে। রোজা থেকেই কিছুটা বিক্রি শুরু হয়। আস্তে আস্তে সেই বিক্রি লাখে এসে পৌঁছায় জুলাইয়ের ৮ তারিখ পর্যন্ত।
• লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ব্যবসার প্রধান উদ্দেশ্য বিক্রি হলেও রিমি এ ধা’রার বাইরে যেতে চান। তিনি চান, এটি একধরনের সেবাও হোক। তাই তো ক্রেতার সাম’র্থের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি করেন। তিনি চান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও যেন আপডেট পণ্য পৌঁছাতে পারেন।