দেবু সিংহ ,মালদা : দীর্ঘদিন যাবত রাস্তা খারাপ হয়ে পড়ে আছে। এবারে পঞ্চায়েত থেকে সেই রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে। ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয় প্রায় ১৬ ফুট চওড়া সিমেন্ট কংক্রিট এর রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এর জন্য রাস্তার দু’পাশে থাকা দোকানপাট গুলি সরানো প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে আগাম কোনো নোটিশ না দিয়ে ই হঠাৎ করে গত রবিবার থেকে দোকানপাট ভাঙতে আরম্ভ করে দেয় স্থানীয় পঞ্চায়েত। এই নিয়েই এলাকাবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতে। ঘটনায় প্রকাশ গত রবিবার পঞ্চায়েতের তরফ থেকে আগাম কোনো নোটিশ না দিয়ে তুলসিহাটা এলাকার বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে হনুমান মন্দির পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে থাকা দোকানের অংশ ভাঙতে শুরু করে। এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকার ব্যবসায়ীরা। তারা সে কাজ বন্ধ করে দেয়।যারা ভাঙাভাঙিতে যুক্ত ছিল তাদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় কাজ।স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এখানে রাস্তা হোক আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু আগাম নোটিশ ছাড়াই বা কাজের সিডিউল না দেখি এভাব দোকান ভাঙ্গা যাবে না ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার গুপ্তা জানান সকালে আমি জানতে পারি এখানে 16 ফিট চওড়া একটা রাস্তা হবে। তারপর বেলা গড়ালে কিছু লোক জেসিবি মেশিন নিয়ে এলাকার বিভিন্ন দোকান গুলির কোথাও বারান্দা কোথাও সিরি ভাঙতে থাকে। পঞ্চায়েতের প্রধান ও সেই সময় উপস্থিত ছিলেন। আমাদের সঙ্গে আগাম কোনো নোটিশ না দিয়ে কোনরকম আলোচনা করি এই কাজ আরম্ভ করে দেয় তারা। এ বিষয়ে আমরা যা তাকে জানালে তিনি কোনো কথার কর্ণপাত করেননি। তাছাড়া 16 ফিটের চওড়া নাম করে কোথাও 18 ফিট পর্যন্ত ভাঙ্গা হয়েছে। আমরা জানি এই জায়গাটা রাজপরিবারের হাটের নামে রেকর্ড করা হয়েছে। রাস্তা নামে কোন রেকর্ড নেই। এই ব্যাপারে আমি প্রশাসনকে দৃষ্টিপাত করতে অনুরোধ জানায়। আমরা পঞ্চায়েতের দোকান ভাঙার বিরুদ্ধে স্থানীয় বিডিও কে করেছি।
ওই এলাকার স্থানীয় বিজেপির পঞ্চায়েত মেম্বার শশী দেব পান্ডে জানান যেখানে রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে সেটি আমার সংসদ এর মধ্যেই পড়ে। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের ব্যাপার থেকে শুরু করে দোকান ঘর ভাঙ্গা কোন ব্যাপারেই আমাকে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান অবগত করেনি।তার সাথে আমি শুনতে পেলাম এলাকার দোকানদারকে কোনরকম নোটিশ করা হয়নি। এভাবে সরকারি কাজ করা যায় না। সরকারের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রধান যা ইচ্ছে তাই করছে। আমিও চাই এই এলাকার রাস্তা নির্মাণ হোক কিন্তু কখনোই আইনকে উপেক্ষা করে নয়।
স্থানীয় বিজেপি নেতা অমিতাভ মৈত্র জানালেন পূর্বতন রাজ্যেরপূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী এই রাস্তাটি কে পি ডব্লিউ ডি র অধীনে নিয়ে এসেছিল। তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী বীরেন্দ্র কুমার মৈত্র র দাবিতেই এ রাস্তাটি জেলা বোর্ড থেকে পি ডব্লিউ ডি র আন্ডারে চলে আসে। বর্তমানে এই রাস্তাটি সংস্কার হওয়া খুব প্রয়োজন। আমিও চাই এই রাস্তাটি তৈরি হোক। কিন্তু কখনোই আইন ভঙ্গ করে নয়।যে সমস্ত দোকানদার ওই রাস্তার দুই ধারে আছে তাদেরকে অন্তত সুযোগ দেয়া উচিত ছিল দখল করা জায়গা থেকে সরে যাওয়া। কিন্তু তাদের কোনো আগাম নোটিশ না দিয়ে পঞ্চায়েত থেকে এই ভাঙ্গাভাঙ্গি কে কখনোই আমি সমর্থন। তাছাড়া ভেঙে দেওয়ার পরে দোকান থেকে ভাঙা এইট পাথরগুলি রাস্তার ধারে পড়ে আছে সেগুলো পরিষ্কার করার কোনো লক্ষণ নেই পঞ্চায়েত তরফ থেকে। অবিলম্বে রাস্তা নিয়ে প্রশাসনের তরফ থেকে সবার সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত স্থানীয় পঞ্চায়েতএর।
স্থানীয় ব্যবসায়ী চন্দন গুপ্তা জানালেন পঞ্চায়েত থেকে আগাম আমাকে না জানিয়ে আমার দোকানের সিরী ও ও দোকানের দরজার নিচের অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমি সারারাত জেগে দোকান পাহারা দিয়েছি। স্থানীয় কিছু মাস্তানদের দিয়েই এই ভাঙ্গাভাঙ্গির কাজ করা হচ্ছে। আমি চাই এ ব্যাপারে প্রশাসন অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করুক। এবং আমাদের যা ক্ষতি হয়েছে তা আমাদের প্রদানকরা হোক।
এলাকার আরো এক ব্যবসায়ী রাজ কুমার গুপ্তা বলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও প্রধানের উপস্থিতিতে জোরপূর্বক আমাদের দোকান ভাঙ্গা হয়েছে। এ ব্যাপারে আগাম কোনো নোটিশ আমাদের দাওয়া হয়নি। জেসিবি দিয়ে জোর করে দোকান ভাঙতে গিয়ে দোকান লাগানো বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে এর জবাব কেউ দিচ্ছে না। আমরা অনেকে প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম কিন্তু প্রধান অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে স্থানীয় বিডিও অফিসে মৌখিক অভিযোগ জানিয়ে এসেছি। ভিডিও অফিস থেকে জানানো হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যারসমাধান করা হবে। আমরা চাই রাস্তা হোক। সরকারি সিডিউল মেনে রাস্তা নির্মাণ হোক। কিন্তু কখনোই অন্যের ক্ষতি করে নয়।
তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শকুন্তলা সিংহ জানান আমি আমার দপ্তরের কর্মীকে মাইকিং করে আগাম এলাকার ব্যবসায়ীদের কে নোটিফিকেশন করতে বলেছিলাম। কিন্তু সে এই কাজটি করে নি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি কেন এই ঘটনাটি ঘটলো। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করি আমরা রাস্তা নির্মাণের পরবর্তী কাজ আরম্ভ করব। আর যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তাও খুব শীঘ্রই সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।