করম উৎসবের কিছু কথা/ঘাশিরাম সিংহমুড়া

Social

মূলত: পশ্চিমবঙ্গে বাংলার রাঢ়ভূমি, ঝাড়খন্ড ও বিহারের কিছু অংশে ‘মূলনিবাসী’ আদিবাসী সম্প্রদায় ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর দিন “করম উৎসব” পালন করে থাকেন।মহিলারা পূর্ণদিবস নির্জলা উপবাস থেকে ব্রত পালন করে থাকেন ।উৎসবের বিশেষত্ব হলো বাড়ির উঠোনের করম নামক এক প্রকার গাছের ডাল কেটে শুদ্ধ আকারে প্রতিস্থাপন করা হয়।এটা মূলত: প্রকৃতির পূজা।

যদিও গৃহস্থের মহিলারা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় ও শস্যের ভাল ফলনের জন্য এই ব্রত বা উৎসব পালন করে থাকেন।কর্ম থেকে করম অর্থাৎ সুস্থ ও সমৃদ্ধ জীবন-যাপনে কর্ম কে পরম ধর্ম হিসাবে মেনে নেওয়া হয়েছে।তবে যুব শক্তির আধার হিসেবেও এই উৎসব পালন করা হয়।করম উৎসবে বিশেষ এক ধরনের গান প্রচলিত আছে।করম ঠাকুর (করম গাছ)কে কেন্দ্র করে দলবদ্ধ ভাবে পুরুষ ও মহিলারা গান গেয়ে গেয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন। প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা অতি সরল প্রকৃতির মূলনিবাসী মানুষজন নাচে-গানে আত্মহারা হয়ে ওঠেন।

কোথাও কোথাও করম উৎসবের আরো একটি প্রথা প্রচলিত আছে।উৎসবের নিশিযাপন শেষ হয়ে গেলে শস্য ক্ষেতে রোগ-জীবাণুর হাত থেকে শস্যকে বাঁচানোর জন্য করম গাছের ডাল বা অন্য গাছের ডাল পোতা হয়।এই প্রথার আরেকটি উদ্দেশ্য হল নিজের জমির মালিকানার মালিকানা স্বত্ব কে প্রতিষ্ঠা করা। তবে মুন্ডা,ভূমিজ সম্প্রদায়ের মূলনিবাসী আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের শ্মশান ভূমি, হাড়শালি (মৃত ব্যক্তির অস্থি যেখানে বিশেষভাবে সংরক্ষিত করে রাখা হয়) জাহিরা (পবিত্র দেবতা স্থল) প্রভৃতি জায়গাতে এই করম গাছের ডাল পোতা হয়।আদিবাসী সম্প্রদায়ের মূলনিবাসী মানুষজন আজ খুশি, আনন্দিত।পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই জনজাতির কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য প্রাচীন ইতিহাসের গৌরব গাঁথা কে মর্যাদা দেওয়ার জন্য। জাতির ভাবনা, আবেগকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য আদিবাসী সম্প্রদায় কৃতজ্ঞ।