৪৫ বছর বয়সেও আন্তর্জাতিক দৌড় প্রতিযোগিতায় চারটে ইভেন্টেই প্রথম নদীয়ার তারক

Social

মলয় দে নদীয়া:-হাবরা অশোকনগরে আন্তর্জাতিক মাস্টার এথলেটিক চ্যাম্পিয়ন অংশগ্রহণ করেছিলেন নদীয়ার শান্তিপুর থানার অন্তর্গত নিধকুড় সাহেবডাঙ্গার বাসিন্দা তারক ঘোষ। বর্তমানে তার বয়স ৪৫ বছর। তিনি এই প্রতিযোগিতার কথা জানতে পেরে তিন মাস আগে আবেদন করেছিলেন উদ্যোক্তাদের কাছে। আবেদনের সারা পেয়ে চলতি মাসের গত ৯ তারিখে আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। হাবরার অশোকনগরে এই প্রতিযোগিতা হয়েছিল। সেখানেই দৌড়ে চারটি ইভেন্টে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ১০ কিলোমিটার, ৫ কিলোমিটার, ১৫০০ মিটার এবং ৮০০ মিটার দৌড়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। যেখানে ভারত বাংলাদেশ নেপাল শ্রীলঙ্কা ভুটান সহ মোট সাতটি দেশের তাবড় দৌড়বাজ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন এই প্রতিযোগিতায়। ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন নদীয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা তারক ঘোষ। রীতিমতন সবাইকে বেশ খানিকটা করে দূরত্ব ফেলে সে চারটি ইভেন্টেই ফাস্ট হয়।

শুধুমাত্র এই প্রতিযোগিতা নয় এর আগেও একাধিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এ রাজ্যসভা ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন তিনি।। ছোট থেকেই দৌড়ানোর নেশা ছিল তার। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কিছুটা পিছিয়ে যেতে হয় তাকে। তবে মনের জোর তার নেশাকে থামাতে পারেনি। বাড়িতে উপার্জনের মানুষ বলতে তিনি নিজেই। ছোট্ট একটি ঘরে তার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে তিনি থাকেন। প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে জন মজুরের কাজ করেন তিনি। তা থেকে যা অল্প পয়সা উপার্জন হয় তা নিয়েই কোন রকমের সংসার চলে তার। তারক ঘোষ বলেন, আমি যদি আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল হতাম তাহলে আমার এই খেলা এবং আমার এই নেশা আরো অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। যেহেতু আমার একার উপার্জনের সংসার চলে সেই কারণে ঠিকমতো প্র্যাকটিস থেকে শুরু করে খাওয়ার খেতে পারি না। পাশাপাশি তিনি বলেন এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন দেশে খেলতে যাওয়ার জন্য সেই টাকা অনেক সময় জোগাড় করতে পারি না। যার কারণে আমার কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তিনি চাইছেন সরকারি তরফে যদি কোন সহযোগিতা করা যেত তাহলে তিনি তার এই প্রতিভাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। তবে তিনি বলেন আগামী দিনে তার লক্ষ্য রয়েছে এশিয়া গেমসে অংশগ্রহণ করার। সেখানে সাফল্য অর্জন করে পরবর্তীকালে অলিম্পিকে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
বাড়িতে রয়েছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা তার মা আন্না রানী ঘোষ। কাপা কাঁপা গলায় তিনি বলেন, ছোট থেকেই ছেলেটার দৌড়ানোর প্রতি নেশা। তবে স্বামী কাজ করতে না পারায় ছেলে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল। যার কারণে মাঝখানে কিছুটা থেমে যেতে হয় ওকে। বর্তমানে ছেলের উপার্জনেই কোনরকম সংসার চলে আমাদের। আমরা কিছুটা আর্থিক সাহায্য পেলে কিংবা ছেলে যদি সরকারি কোন কাজ পেতো তাহলে আগামী দিনে ওর প্রতিভাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতো।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী পাড়ার ফুটবল কোচ এবং দীর্ঘদিন খেলাধুলার সাথে যুক্ত দেব কুমার বিশ্বাস জানান এরকম বহু প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায় সরকারি তত্ত্বাবধানের অভাবে, তারক দা দৌড়ে কৃষ্ণনগর কল্যাণী জাগুলি পর্যন্ত চলে যায় এবং প্রত্যেক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় কিন্তু সেই অর্থে সামান্য জুতো জার্সি কিংবা খেলার ডাক পেলে যাওয়ার ট্রেন কিংবা প্লেনের ভাড়া পর্যন্ত জোগাড় করতে পারেন না। জনপ্রতিনিধিরা সংবর্ধনা দিতে আসেন বটে তবে তাদের কাছ থেকে সেই অর্থে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় না , এটা দুঃখের কারণ তারকদার মতন বহু প্রতিভা রাজ্য এবং দেশের গর্ব।

Leave a Reply