মলয় দে নদীয়া :- ভাঙ্গাচোরা দেওয়ালে চাপা দেওয়া কিছু টালি! অভাবি পরিবারে বিবাহের পাঁচ বছর পর এক ভ্যানচালকের কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করায় মেয়ের অন্নপ্রাশনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলেন দম্পতি। ঘটনাটি নদীয়ার শান্তিপুরের বেরপাড়া এলাকায়। পেশায় ভ্যানচালক কমলেশ কর জানান তিনি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত রক্তদান করে আসছেন স্বেচ্ছায়। শুধু তাই নয় রক্তদানের পর যেই সমস্ত খাবার অথবা উপহার দেওয়া হয়ে থাকে স্বেচ্ছাসেবক সংস্থাদের পক্ষ থেকে সেই সমস্ত কিছুই তিনি নেন না বরং রক্ত দেওয়ার পর খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই নেমে পড়েন আবার কঠোর পরিশ্রমে। সাবালক হওয়ার পরে ১৭ বছরে রক্ত দিয়েছেন প্রায় ৫০ বার ! ইচ্ছা ছিলো নিজের বিয়েতে থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় ক্যাম্প এবং রক্তদান শিবির করবেন তবে আর্থিক কারণে তা আর সম্ভব হয়নি তবে মনে মনে ভেবেছিলেন সন্তান জন্ম নিলে সেই শখ পূরণ করবেন ।
এবার নিজের মেয়ের অন্নপ্রাশনে তিনি আয়োজন করলেন স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের। তিনি আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুরোধ জানাচ্ছেন স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে। এর পেছনে রয়েছে এক করুন ইতিহাস।
কমলেশ বাবুর দিদির বিয়ে হয়েছে ২৫ বছর আগে। দিদির প্রথম পুত্র সন্তান জন্মানোর পর সে মারা যায়।। মারা যাওয়ার কারণ তখন বোঝা না গেলেও ভবিষ্যতে তারা চিকিৎসকদের মাধ্যমে জানতে পারেন দিদি এবং দিদির স্বামী দুজনেই থ্যালাসেমিয়া বাহক। সেই সময় স্কুলে কিংবা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগের সম্পর্কে সচেতনতা এবং পরীক্ষা ব্যবস্থা সেই অর্থে ছিল না। আর সেই কারণেই সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার ফলে তাদের প্রথম পুত্র সন্তানকে বাঁচাতে পারেন না তারা। তার ছোট মেয়েকে নিয়মিত চিকিৎসা ও রক্ত দেওয়ার ফলে আপাতত সুস্থ রয়েছে। এবং বড় মেয়েকে চেন্নাই থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক অপারেশন করার ফলে আপাতত সেও অনেকটাই সুস্থ এমনকি তাকে নিয়মিত রক্ত পর্যন্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
অনুষ্ঠানে এসে তার দিদি রক্ত দিতে চাইলেও থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার কারণে তার রক্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমন্ত্রিত অতিথিদের তিনি অনুরোধ জানান রক্ত দেওয়ার জন্য। কারণ তাদের পরিবার অনুভব করেছেন তাদের সন্তানরা বেঁচে রয়েছেন শুধুমাত্র মানুষের স্বেচ্ছায় রক্তদানের ফলেই। সেই কারণেই রক্তদানের গুরুত্ব বুঝেই তারা এই অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন।
অন্যদিকে কমলেশ বাবুর স্ত্রী এই আয়োজন প্রসঙ্গে বলেন মেয়ে বড় হয়ে যে পেশাতেই স্বাবলম্বী হোক না কেনো, সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকা দরকার তাই প্রথম জন্মদিন রক্তদানের মতন মহৎ কাজ দিয়ে শুরু হল ইচ্ছা আছে ওর প্রতি বছরের জন্মদিনে সাধ্য অনুযায়ী সামান্য কিছুটা হলেও সামাজিক দায়িত্ব পূরণ করব। যাতে ও আগামী দিনে এই মানসিকতা নিয়েই পরবর্তী প্রজন্মকে একই শিক্ষা দিতে পারে। সামান্য আয়োজনে সন্দেহ হবে প্রীতিভোজ তবে ইতিমধ্যেই আত্মীয়-স্বজন পরিজন শুভাকাঙ্ক্ষী সকলেই উপহার হিসেবে দিয়ে গেলেন রক্ত তবে যার মধ্যে অধিকাংশই এই প্রথমবার দিলেন রক্ত। পরিবারের পক্ষ থেকে আজ বাইশ ইউনিট সংগৃহীত রক্ত জমা হল রানাঘাট ব্লাড ব্যাংকে।