মলয় দে নদীয়া:-শতাধিক বছরের প্রাচীন যৌথ পারিবারিক পুজো। আর সেই পুজোয় ঢাক বাজানো থেকে পৌরহিত্য, ভোগ রান্না সবই করেন বাড়ির পুরুষ এবং মহিলারা। এমনকি পূর্বসূরিদের রচিত নিয়ম অনুযায়ী মেনে চলা হয় যাবতীয় পুজো পদ্ধতি ।ফল, চিড়ে, মুড়কি, দই খেয়েই এখানে বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নেন উমা।
শতাধিক বছর আগে শান্তিপুরের নেতাজী সুভাষ রোডে মুখোপাধ্যায় বাড়িতে শুরু হয়েছিল যৌথ পারিবারিক পুজো। সেই সময় তুলসীদাস মুখোপাধ্যায়, রাখাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়, চারুপদ ঘোষাল, রামপদ ঘোষাল, জিতেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, কাশীনাথ ভট্টাচার্যদের হাত ধরে এই পুজোর সূচনা। এদের মধ্যে জিতেন্দ্রনাথ এবং কাশীনাথ সেই সময়কার নামকরা পুরোহিত ছিলেন। সেই কারণে তারা ভট্টাচার্য উপাধি পান। এই পুজো আর কোন একটি নির্দিষ্ট পরিবারের পূজো বলে পরিচিত হয়নি। একাধিক পরিবার ও তাদের আত্মীয় পরিজনদের পরিবার এই পুজোতে সমানভাবে অংশ নিয়ে আসছেন প্রথম থেকে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে এক সময় এলাকায় মদন গোপাল ঠাকুর বাড়ির দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে যাবার পর বাসিন্দাদের জন্য একটি দুর্গাপুজোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই পুজোর সূচনা। তাদের প্রতিমা হয় সাবেকি ধাঁচের। লক্ষ্মী, সরস্বতীর বাহন নেই। তার পরিবর্তে থাকে পদ্ম। প্রতিমা তৈরি করেন বাইরের মৃৎ শিল্পী। এছাড়া পূজো সংক্রান্ত কাজ করেন পরিবারের সদস্যরা। পুরুষ এবং মহিলা মিলে। তাদের পুজোয় বাইরের পুরোহিত নয় বরং পরিবারের সদস্যরাই পৌরহিত্য করেন। তাদের পূর্বপুরুষদের লেখা পুঁথিতে পুজোর নিয়ম-কানুন রয়েছে। আর তা মেনেই পূজো হয়ে আসছে। তাদের ভোগেও রয়েছে বিশেষত্ব। বাড়ির মহিলারাই ভোগ রান্না করেন। ভোগে দেওয়া হয় প্রত্যেক দিনই খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, পুষ্পান্ন, পায়েস, চাটনি, মিষ্টি, পান। বিকেলে আরতির সময় দেওয়া হয় গজা, মিহিদানা ইত্যাদি। দশমীর ভোগে থাকে ফল। এর সঙ্গে চিড়ে, মুড়কি, দই খেয়েই বাপের বাড়ি ছেড়ে রওনা দেন উমা। তাদের পরিবারেই রয়েছে নিজস্ব ঢাক। পুজোতেও বাইরে থেকে ঢাকি আনা হয় না। পরিবারের সদস্যরাই সেই ঢাক বাজান। যৌথ পারিবারিক এই পুজোয় সকলকে আত্মীয়তার এক অন্য বন্ধনে বেঁধে রেখেছে এমনটাই দাবি পরিবারের সকলেরই। এমনকি তাদের বিভিন্ন আত্মীয় যারা এই শহরে আছেন তাদের মধ্যে বয়স জনিত কারনে অনেকে প্রতিমা দর্শনে যেতে পারেন না। সেই এলাকা এই প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জনের দিন।
তাদের পরিবারের সদস্য যুবরাজ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের পূজো আসলে একটি যৌথ পারিবারিক পুজো। আমাদের সকল আত্মীয় পরিজন একসঙ্গে এতে অংশ নিয়ে আসছেন আগাগোড়া। আর ঢাক বাজানো থেকে ভোগ রান্না, পৌরহিত্য সব কাজ বাড়ি পুরুষ এবং মহিলারাই করে আসছেন।”
তবে করোনা বিদায় নিলেও পরিবারের প্রবীণ সদস্য এবং সদস্যরা কর্মসূবাদে বাইরে থাকলেও আজও অনলাইনে অঞ্জলি দিয়ে থাকেন তারা। বর্তমান প্রজন্মের প্রবীণরা পালা করে পূজা করে থাকেন এই পাঁচ দিন।