জামিনে মুক্ত হয়ে শিক্ষক মহাশয় ফিরলেন বীরের বেশে, এলাকায় উৎসবের চেহারা

Social

মলয় দে নদীয়া:- আইনি বেড়াজালে
পুলিশ প্রশাসন কাছে তিরস্কৃত হলেও মানুষের কাছে শুভেচ্ছা ভালোবাসা আশীর্বাদ এর পুরস্কার। বীরের মর্যাদায় এলাকাবাসী বিপদের বন্ধুকে পরালো জয়মাল্য। নদীয়া শান্তিপুরে এলাকাবাসীর উচ্ছাস।

গত ১৫ই আগস্ট এর দিন সকালে এলাকারই এক কৃষক ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক পার হয়ে যাচ্ছিলেন শাক এবং অন্যান্য কৃষিজাত ফসল বিক্রি করতে হঠাৎ তীব্র গতির সাদা রংয়ের চার চাকা প্রাইভেট কার এসে সজোরে ধাক্কা মারে তাকে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। ঘটনাটি দেখেছিলেন হয়তো সকলে তবে হৃদয় বিদীর্ণ করেছিল এলাকা থেকে বেশ কিছুটা দূরে গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় মজুমদারের তিনি তখন ফিরছিলেন মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে।

মৃতদেহ আগলে বসে থাকেন সিদ্ধান্ত নেন সম্প্রতি এক বছরের মধ্যে ১০-১২ টি মৃত্যুর প্রতিকার করতে হবে আজই। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জনবহুল এলাকায় আন্ডারপাস, পর্যাপ্ত আলো পুলিশ প্রশাসনের নিয়মিত দায়িত্ব পূরণের দাবিতে এলাকাবাসীকে পাশে পেয়ে যান। তিনি সকলের সম্মতিক্রমে এলাকার মানুষের সুবিধার্থে জেলা সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডিএম এর উপস্থিতি এবং ঘটনাস্থলে আলোচনার দাবিতে পথ অবরোধ চলে আসে প্রশাসনিক একের পর এক কর্মকর্তারা কিন্তু এলাকাবাসীদের স্পষ্ট জবাব এর আগেও একাধিক বার প্রাণ গেছে কখনো জনপ্রতিনিধি কখনো বা পুলিশ প্রশাসন অথবা ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি কথা দিয়েছে সূরাহার কিন্তু কেউ কথা রাখেনি তাই এবার কথা দিতে হবে সর্বময় কর্মকর্তাকে।

১৫ ই আগস্ট এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিনে অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকে প্রায় ৮ ঘন্টা অবশেষে ডিএম প্রতিনিধি এসে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের সর্বময় কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় সাময়িক মীমাংসা হয় তবে কিছু কিছু কাজ শুরু হয় সেদিন থেকেই। কিন্তু প্রতিবাদীর পরিনাম যে শ্রী ঘরে ঠাঁই হবে তা হয়তো ভাবতে পারেনি অনেকেই তাই গত শুক্রবার মৃত্যুঞ্জয় বাবুকে গ্রেফতার করার সাথে সাথে রাজনৈতিক দল মত নির্বিশেষে এলাকার মানুষ ফেটে পড়ে রাত দশটার সময় সকলে উপস্থিত হয়ে শান্তিপুর থানায় ছুটে আসে শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সহকারী সভাপতি তারা কথা বলে ওসির সাথে।

যদিও প্রশাসনিক স্তর থেকে সরকারি নিয়ম নীতি অনুযায়ী গ্রেফতার করতে হলেও আদালতের মাধ্যমে মানবিক ভাবে মুক্তির পথ বলে দেন তারাই। যদিও এলাকাবাসীর দুর্দশা এ সময় নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল অনেককেই তবে এই বিপদের সময় তাদের অনেকেই দেখা যায়নি তাই দুর্দিনের বন্ধুকে আইনি সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে অনেকেই গ্রেফতার বরণ করতেও রাজি হন। কারণ হিসেবে তারা বলেন সর্বসাধারণের জন্য মৃত্যুঞ্জয়বাবু আন্দোলন করেছিলেন ব্যক্তি স্বার্থ নয়, তাই অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করা আইনগত অপরাধ আর সেই অপরাধ করেছে সকলেই তাই শুধু একজনের উপর নয় শাস্তিও ভাগ করে নিতে পারি আমরা।

আজ অন্ধকার ঘুচে সেই আলোর সুদিন রবিবার হলেও স্পেশাল কোর্টের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তাই শোকের মধ্যেও মানুষের বিপদে পাশে থাকার শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করার পর্ব। আজও উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি চঞ্চল চক্রবর্তী, তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন একজন প্রকৃত শিক্ষক শুধু শিক্ষাঙ্গনে নয় সমাজ কেউ শিক্ষা দেয় আর তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত মৃত্যুঞ্জয় বাবু তিনি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একজন পরোপকারী সমাজসেবী মানুষ অথচ অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তাকেই রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এমনকি এক তৃণমূল কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতেই মৃত্যুঞ্জয় বাবু গ্রেফতার হয়েছিলেন অথচ সাধারণ মানুষের আন্দোলনে সেদিন জনদরদি হয়ে অনেকেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমে পাশে থাকলেও পরবর্তীতে বিপদ বুঝে কেটে পড়েছেন । তবে এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের তাই পুলিশ প্রশাসন যদি তাকে মান্যতা না দেয় তাহলে অন্যায় করা হবে।

এ প্রসঙ্গে এলাকার মানুষজন জানান মাস্টার মশাই অতীব সাধারণ এবং সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এর আগেও বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন আগামীতেও এই এলাকার উন্নয়ন নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। অনেকেই বলে অনেক কিছু তবে বিপদে পাশে পাওয়া যায় না। তাই এমন একজন মানুষকে পাশে পেয়ে আমরা গর্বিত। জীবে সেবা করে যেই জন তিনি আমাদের কাছে ভগবান। কিন্তু সেদিন জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু কেন শুধু একজনকে কেস দেওয়া হয়েছিল প্রশ্ন থেকেই যায়।
মৃত্যুঞ্জয় বাবুর স্ত্রী অবশ্য পরিবারের সুরক্ষার দাবি তুলেছেন তিনি বলেন স্বামীর দৃঢ় মেরুদন্ডর জন্য তিনি গর্বিত ।
মৃত্যুঞ্জয় বাবু বলেন আমি সেদিনও লক্ষ্যভ্রষ্ট হইনি গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী আমি মানুষের জন্য কিছু দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছিলাম। তার কিছুটা শুরু হয়েছে, আশা রাখি আগামী দিনে পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়েই এই এলাকার উন্নয়ন করতে পারব তবে পুলিশ প্রশাসন আমার সাথে একেবারেই খারাপ ব্যবহার করেনি। আইনি প্রটোকল মানতে হয়েছে তাদের। তবে গ্রেফতারদের দিনেও বিচলিত হইনি আজও উচ্ছ্বাসিত নই একজন মানুষ হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব পূরণের জন্যই এভাবেই মানুষের কাজ করবো।

Leave a Reply