বাংলার ঘরে ঘরে হবে ইতু পুজো শুরু হলো ঘট বসানো

Social

মলয় দে নদীয়া :-কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে শহুরে উৎসবের ছোঁয়ায় এখনও হারিয়ে যায়নি গ্রামের নিজস্বতা- ইতু পুজোই যার প্রমাণ।

“অষ্টচাল অষ্টদূর্বা কলসপত্র ধরে।
ইতুকথা একমনে শুন প্রাণ ভরে।।
ইতু দেন বর,
ধনে জনে বাড়ুক ঘর।।”…. এই হল উতু পুজোর মন্ত্র। ইতু পুজো বাংলার একটি লোক উৎসব। মূলত শস্যবৃদ্ধির কামনার প্রতি অঘ্রাণ মাসের রবিবার এই পুজো করা হয়। তবে ইদানিং কালে বাংলার গ্রাম্য দেবদেবীরা যেমন মনসা, ইতু, ভাদু, টুসু, শীতলা- এরাঁ আর তেমন ভাবে পুজো পান না। গণেশ পুজো, বিশ্বকর্মা কার্তিক পূজা সে তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে নতুন করে।
তবে গ্রাম বাংলায় আজও ইতু টুসু ভাদু শীতলা মনসা পূজো লক্ষ্য করা যায়।

প্র‌যুক্তির দৌলতে হারিয়ে ‌যেতে বসেছে বাংলার ব্রতকথা। আমাদের রাজ্যের মেয়েরা অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার ইতু ঠাকুরের পুজো করে থাকেন। ইতু পুজোর নিয়ম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে কার্ত্তিক মাসের সংক্রান্তি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত পুজোর নিয়ম।

ইতু শব্দটি মিতু অর্থাৎ মিত্র থেকে এসেছে। মিত্র শব্দের অর্থ সূর্য। অগ্রহায়ণ মাসে সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে অবস্থান করে এবং এই অবস্থানে সূর্যের নাম মিত্র। এই থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে ইতু পুজো শুরু হয়। সুতরাং ইতু পূজা মানে সূর্য পূজা। বাংলার মেয়েরা ইতুকে শস্যের দেবী হিসেবেই পূজা করে থাকে।

ইতুর ঘটের গায়ে পুতুলি আঁকা এবং ভেতরে দেওয়া হয় শস্যদানা ও তৃণগুচ্ছ। খড়ের বিঁড়ের উপরেই ইতুর সরাকে বসানো হয়। এর পর ওই সরাতে দেওয়া হয় মাটি। মাটি পূর্ণ সরার মাঝে ঘট স্থাপন করতে হয়। আর বাকী অংশে থাকে কলমী, সরষে, শুষনীর মূলসহ শাক। এ ছাড়া ধানের বীজ, মানকচুর মূল লাগানো হয়। আর ছোলা মটর মুগ তিল যব সহ আট রকমের শস্যের বীজও ছড়ানো হয়ে থাকে।

বাংলা মেয়েরা নিজেরাই এই পুজো করে থাকেন। ইতুকে সাধভক্ষণের প্রথাও রয়েছে কোথাও কোথাও। সেদিন নতুন গুড় ও চাল দুধ দিয়ে পরমান্ন তৈরি করে নিবেদন করা হয়।

প্রতি রবিবার ফল, মিষ্টি, ধান, খই দিয়েই ইতুর পুজো করা হয়। শে।দিনে নবান্ন থেকে পিঠে পুলি সবই বানানো হয়। এখনও গ্রামে সবাই মিলে ভাগ করে খান সেই প্রসাদ। কারোর বাড়িতে ইতু পুজো হলে সেই প্রসাদ সবাইকে বিতরণ করে এমনকি বাড়ির পাশে বিভিন্ন জীবজন্তু গৃহপালিত পশু পক্ষী বিশেষত কাকে দেওয়ার পরে তবেই খাওয়ার নিয়ম।

Leave a Reply