মলয় দে নদীয়া :-আজ নদীয়ার ফুলিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নদীয়া জেলার ২৬ তম সম্মেলন।
ফুলিয়া স্টেশন সংলগ্ন পার্টি অফিস থেকে পদযাত্রা করে ফুলিয়া বুইচা কালী মন্দির একটি বেসরকারি লজে তারা উপস্থিত হন। এরপর তারা শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে শুরু করেন ২৬ তম জেলা সম্মেলন। এই জেলা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই এর রাজ্য পরিষদের সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি , রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়, রাজ্য কমিটির সদস্য গৌতম রায় তপন গাঙ্গুলী, জেলা যুব নেতৃত্ব পার্থ অধিকারী, ছাত্রের পাপ্পু বাগারিয়া, শ্রমিক সংগঠন এ আই টি ইউ সির তপন কর্মকার খেতমজুর ইউনিয়নের নূর নবী বাগারিয়া, মহিলা নিলা সরকার শিবা সিংহ রায়, কৃষক সভার রঞ্জিত সরকার, নদিয়া জেলার স্বপন গাঙ্গুলী সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের জেলা নেতৃত্ব এবং শাখা কার্যকর্তা থেকে শুরু করে কর্মীরা।
এই সম্মেলনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পরেশ ঘোষ জানান, জেলার বিভিন্ন ব্লক এবং শহর থেকে ৭৬ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। নতুন কমিটি গঠন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী দিনের রূপরেখা ঠিক করার জন্যই এই সম্মেলন। আজকের সম্মেলনে একদিকে যেমন কর্মী সমর্থকরা তাদের মূল্যবান মতামত পেশ করেন তেমন নেতৃত্ব তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে স্থানীয় স্তর থেকে জেলা রাজ্য বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনের রূপরেখা স্থির করেন। সদ্য সমাপ্ত হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী হিসেবে জেলার জয়ী বিভিন্ন সদস্যদের সংবর্ধিত করা হয়।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য সম্পাদক জোট নিয়ে স্বপন ব্যানার্জি জানান, এক বছর আগে রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেও বাকি ছিল নদীয়া জেলা সম্মেলন। তিনি বলেন, একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের ধর্মীয় বিভাজন বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লড়াই অন্যদিকে রাজ্যে দুর্নীতির পাহাড় এই দুইয়ের মাঝে কমিউনিস্ট এবং প্রগতিশীল শক্তিদের মেইল বন্ধন ঘটাতে আগামী ২৪ শে লোকসভায় বিজেপিকে পরাস্ত করতে INDIA জোট গঠিত হয়েছে। তবে কেরালায় যেমন কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তেমন তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই জারি থাকবে। কারণ ২০১০ সালের আগে বিজেপি আরএসএস ছিলনা এ বাংলায়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার জন্য ফ্যাসিবাদী বিজেপি কে বাংলায় এনেছিল সংখ্যালঘুদের ভোট বাক্সে পাওয়ার জন্য। তাদের প্রশ্রয়ে মূলত বিজেপির রমরমা। তবে ২০১৪ এবং ২০১৯ এর নিরিখে মাত্র ৩১ থেকে ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেছে বিজেপি। দেশের সংশোধনী ব্যবস্থা ত্রুটি থাকার কারণেই বিরোধীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও তারাই দায়িত্বে। তাই এই জোটের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
প্রসঙ্গত ভারতীয় রাজনীতিতে বহু প্রাচীন দল সিপিআই।১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাসখন্ডে গঠিত হয়। যদিও সে ক্ষেত্রেও এই বাংলার মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রধান উদ্যোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। অন্যরা ছিলেন মুজাফফর আহমদ, এস এ ডাঙ্গে, শওকত ওসমানি গোলাম হোসেন সিঙ্গারা ভেলু চেত্তিয়ার সহ নানান বিপ্লবীরা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়, ভূপেশ গুপ্ত অজয় ঘোষ, সোমনাথ লাহিড়ী, ভবানী সেন, অর্ধেন্দু ভূষণ বর্ধন ছিলেন অন্যতম নেতৃত্ব।
১৯৩৪ সালে সিপিআই-এর প্রধান কর্মস্থল ছিল বোম্বাই, কলকাতা ও পাঞ্জাব।
১৯২১ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে তিনটি ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করা হয়। এগুলি হল পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ও কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা। সে সময়ে কমিউনিস্ট কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ছিলো।
১৯৪২ সালের জুলাই মাসে সিপিআই আইনি স্বীকৃতি লাভ করে। অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের উপর কমিউনিস্টদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়।
১৯৪৬ সালে সিপিআই একক শক্তিতে প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
যদিও পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে সিপিআইএ ভেঙ্গে সিপিআইএম গঠিত হয়।
১৫৮৫টি আসনের মধ্যে ১০৮টি আসনে লড়ে তারা আটটি আসন পায়। এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও সুদীর্ঘ ৩৪ বছর অন্যান্য শরিকদের মতোই বামফ্রন্টের দায়িত্ব সামলেছে সিপিআইও । তবে ভারতের সাথে সাথে এ রাজ্যেও শক্তি হারিয়েছে অন্যান্য কমিউনিস্ট দলের মতন সিপিআইও। তবে আগামীতে ইন্ডিয়া জোটের মধ্য দিয়ে কিংবা বামপন্থী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবারো শক্তি বৃদ্ধি করতে পারবে কিনা সেই অপেক্ষায় কর্মী সমর্থকরা।