মলয় দে নদীয়া:- আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা-
ছায়ার সাথে কুস্তি ক’রে গাত্র হ’ল ব্যথা !
ছায়া ধরার ব্যাবসা করি তাও জানোনা বুঝি,
রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, হরেক রকম পুঁজি !
শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের সেই বিখ্যাত কবিতা সকলেরই জানা।
কিন্তু জানেন কি!সেই ছায়াও, অদৃশ্য হয়ে যায় বছরে দুদিন?
বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে জিরো শ্যাডো ডে (Zero Shadow day)। বছরে দুটো এমন দিন দেখতে পাবে মহানগরী।
ভূ-বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে পুরোপুরি মহাজাগতিক এক ঘটনা। বিজ্ঞানের সূত্র দিয়েই যার ব্যাখ্যা মেলে। সূর্য মাথার ওপরে থাকবে অথচ ছায়া পড়বে না, এমন দিন বছরে দুবারই আসে।
কী এই ছায়াহীন দিন (Zero Shadow Day)? সূর্য ও পৃথিবীর কোনও অঞ্চল একই বিন্দুতে অবস্থান করলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁর ব্যাখা, বছরে দুবার উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সময় এই ঘটনা ঘটে। কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণে অবস্থিত কোনও এলাকায় সূর্যের উত্তরায়ণ (২২ ডিসেম্বর থেকে ২১ জুন) ও দক্ষিণায়নের (২১ জুন থেকে ২২ ডিসেম্বর)সময় পৃথিবী পৃষ্ঠ সূর্যের সঙ্গে নির্দিষ্ট কৌণিক অবস্থানে হেলে থাকলে এমন ছায়াহীন দিন দেখা যায়।
পৃথিবী পৃষ্ঠ সূর্যের সঙ্গে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকলে সূর্যের আলো সরাসরি উল্লম্বভাবে পড়ে। ফলে প্রত্যেকের ছায়া তার পায়ের কাছে দেখা যাবে, পাশে পড়বে না। মনে হবে কোনও ছায়াই নেই।
25 এপ্রিল বেঙ্গালুরুতে ‘জিরো শ্যাডো ডে’ (Zero Shadow Day) পালন হয় মহা সাড়ম্বরে।
আজ মঙ্গলবার ১৩ ই জুন বেলা ১১:৩৬ মিনিটে শান্তিপুর এর ওপরে সূর্য লম্ব কিরণ দেয়। আর এই ঘটনা চাক্ষুষ করতে, শান্তিপুর বড় গোস্বামী পাড়ায়, রাজিব বসুর সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্কাই ওয়াচিং” সেন্টারে কচিকাচাদের ভিড় জমে সকাল থেকেই। বাদ যায়নি অভিভাবক রাও।
এ প্রসঙ্গে রাজীব বাবু বলেন,কর্কটক্রান্তি রেখা এবং মকর ক্রান্তি রেখার মধ্যবর্তী অংশে এমন ঘটনা, খুব সহজেই চাক্ষুষ করতে পারেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সূর্যের চারিপাশে পৃথিবী যখন ঘোরে তখন সূর্যের কিরণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবস্থানে লম্বভাবে পরিবর্তিত হয়। যেমন একুশে জুন কর্কটক্রান্তি রেখার উপর , একুশে মার্চ বিষুব রেখার উপরে ।আবার বাইশে ডিসেম্বর দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার উপর।
ঠিক তেমনি, একুশে মার্চ থেকে একুশে জুন উত্তরায়ন অর্থাৎ বিষুব রেখার থেকে একটু একটু করে সূর্যের লম্ব কিরণ কর্কটক্রান্তি রেখার দিকে যেতে চলেছে। যা আমাদের নদীয়ার ধুবুলিয়ার উপর দিয়ে গিয়েছে।আর এই যাত্রাপথে, আজ অর্থাৎ 13 ই জুন, শান্তিপুর ২৩ দশমিক ২৫ ডিগ্রিতে অবস্থান করার সুবাদে এগারোটা ৩৬ মিনিটে কয়েক সেকেন্ডের জন্য লম্ব কিরণ দেবে। আর তখনই নিজের ছায়া থাকবে নিজেরই মধ্যে।
এরপর একটু একটু করে স্থানভেদে তা যেতে থাকবে, ধুবুলিয়ার দিকে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তি রেখার দিকে।