মলয় দে নদীয়া:-মানবজাতির ভ্রূনের লিঙ্গ নির্ণয়, আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু জানেন কি গবাদিপশু বিশেষত গরু এবং মোষের ক্ষেত্রে, তা শুধু আইনি বৈধই নয়, বরং সরকারি প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রচার এবং পরিষেবা আবশ্যকীয়।
আর হবেই না বা কেনো, শুধুমাত্র জন্ম দেওয়া বাদে ষাঁড়ের কোনো কাজ নেই, বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের উন্নতি সাধনে এবং ট্রাক্টর সহ নানা কৃষি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির সুফলের কারণেই বলদের আর বলদ থাকার প্রয়োজন নেই। ক্রমশ জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে দুধ দই ছানা ঘি মাখন মিষ্টান্ন যোগান দেওয়ার জন্য, গরু এখন হয়ে উঠেছে গোমাতা। তাই প্রয়োজন বকনা বাছুরের, এড়ে নয়!
প্রজননে আগত ষাঁড় কখনো প্রকাণ্ড দেহের চাপে অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে গরুর। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জনজীবন ব্যাহত হয়েছে, গোয়াল ঘর থেকে শুরু করে, কৃষকের চাষের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। তাই ধর্মের নামে ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতাও কমছে ইদানিং । প্রয়োজন হয়ে পড়েছে কৃত্রিম প্রজনন।
যদিও এ যাবৎ কাল বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় কৃত্রিম প্রজনন মাত্র আড়াইশো টাকার বিনিময়ে পাওয়া যেতো। কিন্তু সরকারি পরিষেবা পৌঁছেছে তারও আরেক কাঠি উপরে, শুধু কৃত্রিম প্রজনন তাই নয়, মেয়ে বাছুর অর্থাৎ বকনা জন্ম দেওয়ার নিশ্চিত গ্যারান্টি। উন্নত ষাঁড়ের বীর্য সংগৃহীত ওই বিশেষ ধরনের ব্যবস্থায়, ঔষধ সম্বলিত বীর্যের কারণে সদ্যোজাত বকনা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিশোধক হয়ে উঠবে ছোটবেলা থেকেই, সুস্বাস্থ্যের অধিকারিনী হয়ে উঠবে, স্বাভাবিকভাবে তিন বছর নয়, মাত্র ১৪ মাসে সন্তান ধারণ করতে পারবে, শুধু তাই নয় মায়ের দুধ দেওয়ার পরিমাণের দ্বিগুণ দুধ দিতে পারবে সে। তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন কোনো গৃহস্থই।শান্তিপুর বাবলা পঞ্চায়েতের বাথনা গ্রামের বাসিন্দা অনুপ কুমার খাঁ, এর আগে আড়াইশো টাকা দিয়ে কৃত্রিম প্রজনন করিয়েছিলেন বেসরকারি চিকিৎসা সংস্থা থেকে, কিন্তু সেক্ষেত্রে এড়ে না বকনা নিশ্চয়তা পাননি যদিও, সৌভাগ্যবশত তার গাভীর বকনা বাছুরই হয়েছিলো। তবে এবার সরকারি এই ব্যবস্থা চালুর কথা জানতে পেরে, বকনা গ্যারান্টি এই বিশেষ সরকারি ব্যবস্থায় প্রজনন করিয়েছেন পাঁচশত টাকা দিয়ে।
শান্তিপুর বেলঘড়িয়া দু’নম্বর পঞ্চায়েতের গভারার এলাকার বিধান বিশ্বাস জানান, এটা বিজ্ঞানীদের যুগোপযোগী আবিষ্কার, যা তার মত সারাদেশে বহু গোপালকদের উপকার হবে।
এ বিষয়ে শান্তিপুর ব্লক প্রাণী সম্পদ দপ্তর থেকে আগত প্রানীবন্ধু বিশ্বজিৎ সরকার জানান, আধার কার্ড এবং ব্যাংক একাউন্ট এবং আবেদনের ভিত্তিতে, এই বিশেষ ধরনের বীর্য বানানো হয় যা রক্ষিত হয় নাইট্রোজেন গ্যাসের মধ্যে, অত্যন্ত যত্নের সাথে, তা গর্ভে সঞ্চার করা হয়। এখনো পর্যন্ত তিনি এই কাজ 38 টি করেছেন, শান্তিপুর ব্লকের মধ্যে বাবলা বেলঘড়িয়া ১ নম্বর এবং আরবান্দী এক নম্বর পঞ্চায়েতের একজন করে প্রানীবন্ধু এ কাজ করে থাকেন। তবে চাহিদা অনুযায়ী তারা বীর্য সাপ্লাই পাচ্ছেন না, তবে মানুষের সচেতনতা এবং চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সরকার যোগানের সমতা দিতে বদ্ধপরিকর থাকবেন বলেই তিনি আশাবাদী।
শান্তিপুর ব্লকের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিক হিসেবে দায়িত্বে থাকা বি এল ডি ইউ ডঃ জ্যোতির্ময় চন্দ জানান গত জানুয়ারি মাস থেকে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে চালু হয়েছে, ইতিমধ্যেই গবাদি পশু প্রাণী প্রতিপালনকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে, তবে সিমেন্স সংগ্রহে র জোগান আপাতত একটু কম থাকলেও পরবর্তীতে তা সহজলভ্য হয়ে যাবে।
সংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, বিপুল পরিমাণে মানুষের খাদ্যের যোগান, সহ নিরামিষাশীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।