অদ্বৈত মহাপ্রভুর গুরুদেব মাধবেন্দ্রপুরীর তিরোধান দিবস উপলক্ষে নদীয়ায় অনুষ্ঠিত হলো মাধব উৎসব

Social

মলয় দে নদীয়া :- মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য দেবের সন্ন্যাস গ্রহণের পর কাটোয়া থেকে ১০ দিন যাবৎ অবস্থান করেন নদীয়ার শান্তিপুর সুরধ্বনি তীরে বর্তমান বাবলা অদ্বৈত পাটে

অদ্বৈত প্রভুর সাধন ক্ষেত্রে। সেখানেই শচীমাতার সাথে সাক্ষাতের পর তিনি লীলাচলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
চৈতন্য ভগবত অনুসারে, শান্তিপুর ধামে মহাপ্রভুর দশ দিনের মধ্যে দোল পূর্ণিমার আগে দ্বাদশী অর্থাৎ আজকের তিথিতে অদ্বৈত আচার্যকে কাঁদতে দেখে মহাপ্রভু কারণ জিজ্ঞাসা করেন। অদ্বৈত আচার্য জানান, তার গুরু মাধবেনেন্দ্র পুরের তিরোধান দিবসের কথা। যখন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদে বলেন তিনি তারও পরম গুরু, তাই উৎসবের আয়োজন করতে বলেন, সেই উৎসবে প্রধান অতিথি হন শ্রী চৈতন্যদেব স্বয়ং নিজে। শচীমাতা এবং সীতা ঠাকুরানী ৬৪ রকম নিরামিষ বিভিন্ন ধরনের রন্ধন করেন, মাধবেন্দ্রপুরীর উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদনের পর , তা ভক্তবৃন্দদের বিতরণ করা হয়। মহাপ্রভু স্বয়ং নিজে বলেন এই বিশেষ তিথিতে, এখানে বসে প্রসাদ গ্রহণ করলে গোবিন্দের প্রতি ভক্তি দেখানো হয়। সেই থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ভক্তবৃন্দরা ছুটে আসেন আজকের এই বিশেষ দিনে। এটি গোবিন্দ দ্বাদশী নামেও পরিচিত।
অতীতে রামদাস বাবাজী মহারাজ সম্প্রদায় এবং অদ্বৈত পাটের সমন্বয়ে এই উৎসব পালিত হয়ে আসতো তবে সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে মায়াপুর ইসকন এবং অদ্বৈত পাটের যৌথ প্রচেষ্টায় এই উৎসব পালিত হচ্ছে।
এবং একসময় মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের নিজে হাতে সৃষ্ট , এই উৎসবের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন, বংশানুক্রমিক ভাবে বজায় রেখেছেন শ্রীশ্রী বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী বাড়ির উত্তরসূরিরা। যার মধ্যে ১৪ তম প্রজন্ম, বর্তমান অদ্বৈত পাটের প্রধান সেবাইত প্রশান্ত গোস্বামী। তিনি বলেন, এবছর আটচল্লিশ হাজার পাতার থালা কেনা হয়েছে, ভক্তবৃন্দদের প্রসাদ বিতরণের উদ্দেশ্যে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভক্তবৃন্দদের সমাগম ঘটে আজ। ভোর চারটে থেকে শুরু হয়েছে ভোগ রান্না, অদ্বৈত আচার্য এবং মাধবেন্দপুরীকে পূজা এবং ভোগ নিবেদনের পর সকাল দশটা থেকে বিকাল ৪ঃ০০ টা পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ হাজার ভক্তবৃন্দ মাঝে বিতরণ করা হবে প্রসাদ।
প্রশান্ত গোস্বামীর পুত্র , বর্তমান শান্তিপুরের বিধায়ক ড: ব্রজ কিশোর গোস্বামী, বলেন এই উৎসবের ইতিহাস। পৃথিবীর ৪৫ টিরও বেশি দেশ থেকে ভক্তবৃন্দরা আজ উপস্থিত হয়েছেন সীতানাথ পাট অর্থাৎ এই অদ্বৈত পাটে। সকল ভক্তবৃন্দদের সাথে, আজ সারাদিন মিলিত হন তিনিও।
শান্তিপুরের তো বটেই নদিয়া তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কীর্তন দল, ট্রেনে বাসে উপস্থিত হয়েছেন সকাল থেকেই। সমস্ত মন্দির প্রাঙ্গণ সারাদিনব্যাপী কীর্তন এবং নাম সংকীর্তনে মুখরিত হয়ে থাকে । এই উপলক্ষে বসে মেলা, প্রশাসনিক বিশেষ নজরদারিও লক্ষ্য করা যায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।

Leave a Reply