মলয় দে নদীয়া :-বালি তুলার মধ্য দিয়েই সূচনা হয়ে গেল করম পরবের।
জাওয়া দেওয়ার সেই আকুতি নজরে আসে জাওয়া গানে…
“দে দাদা দে দাদা টুপা কিনে দে
দে দাদা দে দাদা সুপটি কিনে দে ”
দাদাকে বোন বলছে টুপা কিনে দিতে যাতে সে বালি তুলে আনতে পারে।
” আস লো সঙিনি হামরা লদিকে যাব
গঙ্গা যমুনার বালি ছাঁকিয়ে আনিব
বালি উঠাব হামরা ডালা ভরিব
হলুদ মেথি গঙ্গা জলে জাওয়া দিব” ।
নদী বা কোনো জলাশয় থেকে বালি তুলে ডালা ভরতি করা হয়। তার পর বিভিন্ন বীজ গুলোকে হলুদ জলে মাখিয়ে ওই ডালার বালিতে ফেলা হয়। কি কি বীজ ফেলা হয় জাওয়া হিসাবে তার একটা আইডিয়াও গানেই বলা আছে…
“মুগ দিব শন দিব আরঅ দিব কুত্থি
জনাহাইর সইরষা হলুদ পানি সঙে গঁধা মেথি.. ”
৫/৭ রকম অর্থাৎ বিজোড় সংখ্যক রকমের বীজ দিয়ে জাওয়া ফেলা হয়।
করম পরব ( উৎসব ) আদিবাসী জাতির একটি কৃষি ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী উৎসব । আদিবাসী যেমন – ওঁরাও, সাঁওতাল, মুন্ডা, মাহাতো সহ প্রায় 38 টি জাতির মানুষ করম পরব পালন করে ।
প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশী তিথিতে করম পরব উৎসব হয়ে থাকে। এর সাত / পাঁচ / তিন দিন আগে মেয়েরা ভোরবেলায় শালের দাঁতন কাঠি ভেঙে নদী বা পুকুরে স্নান করে বাঁশ দিয়ে বোনা ছোট টুপা ও ডালায় বালি দিয়ে ভর্তি করেন। তারপর গ্রামের প্রান্তে একস্থানে ডালাগুলিকে রেখে জাওয়া গান গাইতে গাইতে তিন পাক ঘোরে। এরপর তাতে তেল ও হলুদ দিয়ে মটর, মুগ, বুট, জুনার ও কুত্থির বীজ মাখানো হয়। অবিবাহিত মেয়েরা স্নান করে ভিজে কাপড়ে ছোট শাল পাতার থালায় বীজগুলিকে বুনে দেন ও তাতে সিঁদুর ও কাজলের তিনটি দাগ টানা হয়, যাকে জাওয়া ডালি বলা হয়। এরপর ডালাতে ও টুপাতে বীজ বোনা হয়। এরপর প্রত্যেকের জাওয়া চিহ্নিত করার জন্য কাশকাঠি পুঁতে দেওয়া হয়। একে জাওয়া পাতা বলা হয়। যে সমস্ত কুমারী মেয়েরা এই কাজ করেন, তাঁদের জাওয়ার মা বলা হয়। ডালার জাওয়াগুলিকে নিয়ে তাঁরা গ্রামে ফিরে আসেন।
করম পুজোর দিন গ্রামের বয়স্কদের একটি নির্দিষ্ট করা স্থানে দুইটি করম ডাল এনে পুঁতে রাখা হয়, যা সন্ধ্যার পরে করম ঠাকুর এবং ধরম ঠাকুর হিসেবে পূজিত হন। কুমারী মেয়েরা সারাদিন উপোষ করে সন্ধ্যার পরে থালায় ফুল, ফল সহকারে নৈবেদ্য সাজিয়ে এই স্থানে গিয়ে পূজা করেন। করম ডালে ভেঁট (আলিঙ্গন) নেন, যা বৃক্ষের প্রতি ভালবাসার প্রতীক । এরপর করম ডাল ও জাওয়া ডালি কে ঘিরে নাচ গান চলে। পরদিন সকালে মেয়েরা জাওয়া থেকে অঙ্কুরিত বীজগুলিকে উপড়ে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়ে বাড়িতে বিভিন্ন স্থানে সেগুলিকে ছড়িয়ে দেন। এরপর করম ডালটিকে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয় জলাশয়ে ।
জোহার করম রাজা. ….