মলয় দে, নদীয়া :- ১৮৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আজকের দিনে অর্থাৎ ২৮ শে ডিসেম্বর, তেজপাল সংস্কৃত কলেজে ৭২ জন প্রতিনিধি নিয়ে অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। যার মধ্যে বাংলার অন্যতম ছিল উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজি, ফিরোজ শাহ মেহতাব, আনন্দ চালু, কে টি তেলং, বদরূদ্দিন তৈয়বজী প্রমূখ।
প্রথমে ১৯৮৭ সালে মাদ্রাজে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন বসে। এরপর বড়লাট রিপনের সময় ইংরেজ শাসনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি জেনে নেওয়ার প্রয়োজনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছিলো।হাজার ১৯০৫ সালে বড়লাট কার্জনের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বাংলায় হিন্দু নেতাদের মধ্যে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।ঋষি অরবিন্দ ঘোষ ,বালগঙ্গাধর তিলক, লালা রাজপত রায়, বিপিনচন্দ্র পাল স্বদেশী আন্দোলন গড়ে তোলেন। কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের মধ্যপন্থী ও অগ্র-পথিক দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে জাতীয় প্রাদেশিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে কংগ্রেস। ইতিমধ্যে মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় মুসলিম লীগ গঠিত হয় ঢাকায়। ১৯১৬ সালে স্বায়ত্তশাসন এর জন্য লখনউ চুক্তি সম্পাদন করে। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ এর হত্যাকান্ড রাজনৈতিক মোকাবিলার প্রেক্ষাপট সুদীর্ঘ করে জনগণ। ও গণভিত্তিক রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।গান্ধী ছাড়া কংগ্রেসের মতিলাল নেহেরু, মদনমোহন মালব্য, চিত্তরঞ্জন দাস পরবর্তীতে রাজাগোপালাচারী, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, আবুল কালাম আজাদ, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মতো বিভিন্ন যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হয় কংগ্রেস দলের।সুভাষচন্দ্র বসু প্রথমে এই দলে থাকলেও গান্ধীজির সঙ্গে মতানৈক্যে পরবর্তীতে গঠন করেন আজাদ হিন্দ বাহিনী। ১৯৩৬ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী এবং সমাজবাদী একটি গ্রুপ কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি গঠন করে।সোশালিস্টদের পক্ষে জহরলাল নেহেরু এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রচ্ছন্ন মদত ছিলো বলেই জানা যায়। এরপরে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া , ভারতীয় জনতা দল, এবং বিভিন্ন উপদল মতাদর্শগত, এলাকা গত, এবং মতানৈক্যে খন্ড খন্ড হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। শেষ ভাগের নিদর্শন বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস। অথচ এই দল থেকেই মূলত উৎপত্তি সব দলের। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বহু নেতানেত্রীও জাতীয় কংগ্রেস ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা তলে বাড়িয়েছেন তাদের মান, দাম, পরিচিতি! আজও সে পতাকায় ইতিহাস জড়িয়ে ভারতবর্ষের দীর্ঘদিনের জাতীয় কংগ্রেসের দেশের দায়িত্বভারের নানান কাহিনী। দীর্ঘদিন দেশের দায়িত্বভার ছিলো জহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী । আজও সে পতাকা প্রবাহমান, তবে পতাকা দল থেকে সরে গেছেন অনেকেই!
নদীয়ার মাটিতে আজ যারা তৃণমূল নেতৃত্বে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বিভিন্ন গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদে তাদের বেশিরভাগ অংশই রাজনৈতিক হাতেখড়ি হয়েছিলো সেই জাতীয় কংগ্রেস থেকেই! জনগণের মঙ্গলার্থে দোহাই দিয়ে, যারা বেশিরভাগই বর্তমান সরকারের সাথে যোগদান করেছেন। অথচ আবেগপ্রবণ সেদিনের ছোটো বুথ কর্মী, আজও জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি সমান যত্নবান। তাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, একদিন আঞ্চলিক দলের গুরুত্ব কমবে বর্তমান কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে লড়াই করতে পারে একমাত্র জাতীয় কংগ্রেস। আগামীকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দলের।
জেলার কৃষ্ণনগর, চাকদহ, রানাঘাট, শান্তিপুর ,করিমপুর, বেথুয়া, পলাশী সর্বত্রই আজ ১৩৬ তম জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হলো স্বল্প উপস্থিতিতেও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। যার মধ্যে শান্তিপুর কে সি দাস রোডে মহতমা গান্ধী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করতে দেখা গেলো শান্তিপুর জাতীয় কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে মথুরা কর্মকার বিপ্লব ঘোষ কে।