অনাদরে চলে গেলো শান্তিপুর পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপতি মিহির খাঁ’র মৃত্যু দিবস

Social

মলয় দে, নদীয়া : গতকাল ছিল ২৮ শে ডিসেম্বর। ২০১৬ সালের এই দিনেই কল্যাণী জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন এক সময়ের শান্তিপুর শহরের প্রাক্তন পৌরপিতা , বিশিষ্ট শিক্ষক , সমাজকর্মী , বামপন্থী আদর্শের অনুরাগী ও সাংবাদিক মিহির খাঁ ।

১৯৩৯ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি । তার পিতা শশী খাঁ ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং শান্তিপুর পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপতি । মিহির খাঁ ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক হলেও বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ । শান্তিপুর ওরিয়েন্টাল একাডেমি স্কুলে শিক্ষকতা দিয়েই তার কর্ম জীবনের শুভসূচনা হয়েছিল । বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী মিহির খাঁ ১৯৬৯ সালে প্রথম পৌর নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন । এরপর ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত দুদফায় পৌরপতি পদে আসীন ছিলেন । করোনার কারণেই হোক বা গুরুত্বহীনতা তার দল বা পৌরসভা, গতকাল তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে কোন স্মরণ সভা করা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি! তবে শান্তিপুর মরমীর পক্ষ থেকে তার জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে কিছুদিন আগে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন সদস্যরা।
তিনি শান্তিপুর শহরে পৌর পতি থাকাকালীন যে কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন তার মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হলো শান্তিপুর পৌরবাজার ও পৌর স্টেডিয়াম নির্মাণ ।

পরবর্তীকালে তিনি শান্তিপুরের গবেষণার সুবিধার্থে কালীকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য বিরচিত ” শান্তিপুর পরিচয় ” গ্রন্থটি প্রকাশ করেন । মিহির খাঁ শান্তিপুরের ওপর গবেষণা করেই “শান্তিপুর লোকসংস্কৃতি পরিচয়” ও “শান্তিপুরের লোকসাহিত্য সংগ্রহ” — নামে দুইখানি গ্রন্থ প্রকাশ করেন যেগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে এক অমূল্য সম্পদ।

শান্তিপুরের বর্তমান প্রজন্মের সাথে অতীতের শান্তিপুর কৃতিদের বিশেষ পরিচয় করানোর জন্য বেশ কয়েক জনের সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখে গেছেন তিনি । শান্তিপুরের যে সকল সুসন্তান দের সম্পর্কে তিনি বিশেষ প্রবন্ধ রচনা করে গেছেন তারা হলেন — স্যার অতুল প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় , পণ্ডিত লক্ষ্মী কান্ত মৈত্র , ড: নলিনী মোহন সান্যাল , শান্তিপুর ফটক পাড়ার ড: রাম চন্দ্র ভট্টাচার্য্য , ড: বাসুকুমার বাগচী প্রমুখ । মিহির খাঁ কর্তৃক রচিত শান্তিপুর সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তথ্যমূলক রচনাগুলিকে শান্তিপুরের সমাজসেবা মূলক সংস্থা মরমী প্রকাশ করেছে ।
তার সমস্ত জনহৃতকর কার্যাবলীর পাশাপাশি সাংবাদিকতার সাথেও যুক্ত ছিলেন মিহির খাঁ ; ইংরেজি পত্রিকা অমৃত বাজার ও স্টেটসম্যান পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতা করতেন । আবার শান্তিপুরে ” জনতার মুখ ” নামক পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক ছিলেন মিহির খাঁ । যদিও পরবর্তীকালে রাজনৈতিক কারণ বশতই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলেই সূত্রের খবর ।

মিহির খাঁর জনহৃতকর কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম কাজ ছিল গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্টুডেন্ট ওয়েল ফেয়ার চারিটেবিল ট্রাস্ট পরিচালিত টেক্ট বুক লাইব্রেরি স্থাপন করা । এছাড়াও শান্তিপুর শহরে গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও মশালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তার যথেষ্ট সক্রিয়তা লক্ষ্য করা গিয়েছিল বলেই সূত্রের খবর ।

তবে মিহির খাঁ র প্রয়াণের পর শান্তিপুর যেন হারিয়েছে এক মহীরুহ , বর্তমান প্রজন্ম যেনো হারিয়ে ফেলেছে তাদের অভিভাবককে । তার মতো সময় নিষ্ঠ , কর্তব্য পরায়ণ , সাহসী , মানুষকে অভয় প্রদানকারী , শৃঙ্খলা পরায়ণ মানুষকে আজকের এই বাস্তবের প্রেক্ষাপটে বড়ই দরকার । তবে তিনি বেঁচে আছেন ও থাকবেন শান্তিপুর বাসির হৃদয়ে চিরকাল তার সৃষ্টি , সমস্ত কর্মকাণ্ড ও নীতি আদর্শের মধ্যে দিয়ে ।

Leave a Reply