এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো?” প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া যাত্রাপালা নিয়ে প্রশ্নচিহ্নের মুখে কলাকুশলীরা

Social

মলয় দে নদীয়া :- “এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো?” ড: তাপস কুমারের রচনায়, বাসুদেব গোস্বামী নির্দেশনায়, শান্তিপুর বিবেকানন্দ নাট্য সমাজের পরিবেশনায়, মা মনসাতলা বারোয়ারির ব্যবস্থাপনায় মনসা পূজো উপলক্ষে আয়োজিত ১৬২ বছর ধরে পুতুল নাচ এবং যাত্রাপালার আয়োজন আজও অব্যাহত।

বিপুল সংখ্যক মানুষের আনন্দ দুঃখ শোক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল স্টেজের উপর থেকে, করতালির শব্দেই বোঝা যাচ্ছিলো যাত্রা প্রিয় মানুষের সংখ্যা কম নয়।
ধর্মের সাথে শিল্প সংস্কৃতিরও পীঠস্থান নদীয়া। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শান্তিপুর। এক সময় এখানকার খেউর গান, কবিগান, জারি গান, কীর্তন দল, নাটক যাত্রাপালার ডাক পড়তো রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও বেশ কিছু যাত্রাপালা শান্তিপুর থেকে দূর দেশে পাড়িদিত বিভিন্ন সামাজিক ধর্মীয় রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে। তবে কালের নিয়মে একসময়ের যাত্রাপালা বায়োস্কোপ থিয়েটার পরবর্তীতে সিনেমা বর্তমানে অবশ্য অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে বন্দী সবকিছু।
প্রতিটা পাড়ায় পাড়ায় যুবসমাজ মঞ্চস্থ করতো নাটক যাত্রা।অভিনয়ের সৃজনশীলতার প্রতিযোগিতা হতো যে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। সাবেকিয়া না বেশ কয়েক যুগ ধরে রেখেছিল নদীয়ার শান্তিপুরের অধিবাসীরা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও প্রায় ৩০-৪০ টি নামিদাম যাত্রাপালার কথা শোনা যেতো। তবে সেই সংখ্যাটা এই ৭৫ বছরে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। যারা আঁকড়ে ধরে এখনও রয়েছে তারাও প্রশ্নের জন্য মুখে।
শান্তিপুর শহরের বর্তমান আট নম্বর ওয়ার্ডের মামুন সাব বারোয়ারীতে মনসা পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরেই বাংলার কৃষ্টি ধরে রাখার তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। গত দু’বছর করো না পরিস্থিতির কারণে সম্ভব না হলেও এ বছর আবারো সাবেকি ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুতুল নাচ, যাত্রাপালার আয়োজন করে তারা। রক্তদান, বস্ত্র দান , কচিকাচাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,সাত দিন ধরে চলে মনসা পূজা উপলক্ষে নানান অনুষ্ঠান। এবারের পূজা উদ্বোধন করেন বিধায়কিশোর গোস্বামী, উপস্থিত হয়েছিলেন শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ ভাইস চেয়ারম্যান কৌশিক প্রামানিক সহ বিভিন্ন কাউন্সিলরগণ । স্থানীয় কাউন্সিলর রুপা ঘোষ কর বলেন, মনসা পূজা উপলক্ষে এই এলাকা উৎসবের চেহারা নেয়।
মনসাতলা বারোয়ারির সম্পাদক স্বপন ঘোষ জানান, যাত্রর দর্শক আজও আছে, তবে শিল্পীদের উপযুক্ত সম্মান এবং পারিশ্রমিক দিলে এই পেশা বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যাবে না।
শান্তিপুর বিবেকানন্দ নাট্য সমাজের সদস্য জয়দেব পাল জানান, বর্তমান জনহিতকর সরকারের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি যাত্রা শিল্পীদের সম্মান দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, তাহলে আবারো গ্রাম বাংলার শিল্পীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে। একসময় সংখ্যায় প্রচুর যাত্রা দল থাকলেও বর্তমানে ব্রহ্মাতলা, সূত্রাগর ,কৃষ্ণ কালিতলা, নেত্য কালিতলায়, এবং মনসা তলা বারোয়ারীর মতো কয়েকটি এলাকায় ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না।

Leave a Reply