মলয় দে নদীয়া:- বিগত কয়েক বছর আগে নৌকাডুবির দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে নদীয়ার শান্তিপুর নৃসিংহপুর কালনা ফেরিঘাটে বৈশাখের শেষ শনিবার ভবা পাগলার মেলা উপলক্ষে বিশেষ পুলিশি তৎপরতা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বেশ কিছু বছর আগে এই ভবা পাগলার মেলাকে কেন্দ্র করেই অগণিত মানুষের ভিড় হয়েছিল নৃসিংহপুর ফেরিঘাটে। দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত সমাগম ঘটে এই ঘাটে, তারপরে বেশ কিছুক্ষণ বৃষ্টির কারণে ঘাট পারাপার বন্ধ থাকে, কিন্তু তারপরেই ঘাটে পারাপার চালু হতেই কালনা ফেরিঘাটের একটি নৌকা পৌঁছায় যাত্রীদের পারাপারের জন্য। তখনই যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে নৌকাটি বেসামাল হয়ে জলে পাল্টি খায়, এবং ঘটনাস্থলে নৌকায় থাকা সমস্ত যাত্রী জলে তলিয়ে যায়। এরপর প্রাণে বাঁচতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, কেউবা পারে থাকা মানুষদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে থাকে কিন্তু এলাকাবাসীর তৎপরতায় এবং পুলিশি তৎপরতায় বেশ কিছু মানুষকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। বাকি বেশকিছু মানুষ গভীর জলে তলিয়ে যায়, এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকাজুড়ে। খবর পেয়ে শান্তিপুর থানার পুলিশ উপস্থিত হয় নৃসিংহ পুর ফেরিঘাটে, এবং তৎক্ষণাৎ বর্ধমান জেলা পুলিশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে শুরু হয় দুই জেলার পুলিশি তৎপরতায় তলিয়ে যাওয়া মানুষজনের খোঁজ এবং নৌকাটির খোঁজ চালানো। নামানো হয় ডুবুরি, এনডিআরএফ টিম, কিন্তু উদ্ধারকাজে দেরি হওয়ার কারণ দেখায় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা এবং তখনই উত্তেজিত জনতা ঘাটে থাকা একটি লঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশের ওপর ঢিল ছোড়ে। ঘটনাস্থলেই একজন পুলিশ অফিসার গুরুতরভাবে আহত হন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান। তখনই পরিস্থিতি সামাল দিতে শান্তিপুর থানার পুলিশ বিশাল পুলিশবাহিনী নামিয়ে এলাকায় লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। এর পর বেশ কিছুদিন গঙ্গায় পুলিশি তৎপরতায় মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ চলতে থাকে এবং বেশ কিছু মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় সেই ভয়ঙ্কর রাতের স্মৃতিকে মাথায় নিয়ে এর আগেও বহুবার পুলিশি তৎপরতা দেখা গেছে এই মেলাকে কেন্দ্র করে।
কিন্তু দীর্ঘ দু’বছর করোনা আবহাওয়া থাকার কারণে ভবা পাগলার মেলা বন্ধ ছিল। এবছর করোনা আবহাওয়া সমস্ত বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ায়, এই মেলা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। ঘাটে থাকা মাঝিরা এবং এলাকার মানুষ সহ পুলিশ অনুমান করছে করোনা আবহাওয়া শিথিল হওয়ার কারণে এবারে জনসমাগম অনেকটাই বেশি হতে পারে, তাই অনুষ্ঠানের আগের থেকেই পুলিশ তাঁদের কড়া নিরাপত্তার বলয় তৈরি করতে শুরু করেছে। নৃসিংহপুর ফেরিঘাটে , পুলিশের এই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা আজ থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত চলবে। ইতিমধ্যে নৃসিংহপুর কালনা ঘাট এলাকায় জনসাধারণের পারাপার হওয়ার জন্য বেশকিছু এন্ট্রি গেট তৈরি করেছে শান্তিপুর থানার পুলিশ। থাকছে গঙ্গায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, জলে নামানো হয়েছে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কোর্স এবং এনডিআরএফ এর স্পিড বোর্ড। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কমপক্ষে ১৫০ জন পুলিশকর্মী প্রতিদিন কড়া পাহারায় উপস্থিত থাকবে ফেরিঘাট চত্বরে, তার সঙ্গে পুলিশের তরফ থেকে চালানো হবে প্রতিনিয়ত সচেতনতা প্রচার। আর এই কাজই আজ থেকে শুরু হয়ে গেল শান্তিপুর নৃসিংহপুর কালনা ফেরিঘাটে। এই কাজকে স্বচক্ষে পরিদর্শন করতে আজই ফেরিঘাটে উপস্থিত হন রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত। রানাঘাটের এসডিপিও প্রবীর মন্ডল, শান্তিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক লাল্টু ঘোষ, সার্কেল ইন্সপেক্টর গৌরীপ্রসন্ন বন্ধু সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা। বলা যেতে পারে কোন রকম দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে দিকেই সদা তৎপর শান্তিপুর থানার পুলিশ, এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় এর মাধ্যমেই যাত্রী সাধারণকে ঘাটে পারাপার হতে হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। কোনোরকম অসুবিধা হলে তৎক্ষণাৎ পুলিশ কে জানানোর বার্তা দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপান্তর সেনগুপ্ত।