জলঙ্গি নদী বাঁচাতে সমবেত হলেন তেহট্টের মানুষ

Social

নিউজ সোশ্যাল বার্তা,শঙ্খ শুভ চক্রবর্তী : শীতকালীন ছুটির আমেজে মিঠে কড়া রৌদ্রে পিঠ এলিয়ে সকলে যখন চড়ুইভাতিতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় পরিবেশ ও জলঙ্গি নদী বাঁচানোর উদ্দেশ্যে “সেভ জলঙ্গি (নদী সমাজ)” পৌঁছে গেছিল জলঙ্গি পাড়ের অন্যতম বড় জনপদ তেহট্টে। তেহট্টর পরিবেশ সচেতন নাগরিক সমাজ অংশীদার হলেন এক অন্যরকম রবিবাসরীয় উৎসবে।ডাঃ প্রলয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে “তেহট্ট জলঙ্গী নদী বাঁচাও কমিটি”, “লালন নাট্যগোষ্ঠী”, “ওয়েবস্টার (তেহট্ট শাখা)”, “ওয়ার্ল্ড এক্সপ্লোরার” সহ বিভিন্ন সংগঠন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তেহট্ট নামটি এসেছে প্রাচীন ত্রিহট্ট থেকে। অর্থাৎ তিনটি হাট হত যেখানে। জলপথ নির্ভর বাণিজ্যের স্বর্ণযুগে তেহট্ট তখন এক সমৃদ্ধ জনপদ। এখনো হাট বসে জলঙ্গি পারের এই জনপদে ,যেমন বসেছিল গতকাল রবিবারে।
জলঙ্গী নদী বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সমবেত নাগরিক সমাজ এক সুশৃংখল ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু করেন তাদের অনুষ্ঠান।পদযাত্রা শুরু হয় জিতপুর মোড় থেকে সকাল পৌঁনে দশটায়, শেষ হয় তেহট্ট খেয়াঘাটে।পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন এলাকার শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, ছাত্র-ছাত্রীসহ পরিবেশ সচেতন সাধারণ মানুষ।

পদযাত্রার শেষে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় “নদীর পাড়ে বসে আঁকো নদীর ছবি”, আবৃত্তি ও ক্যুইজ প্রতিযোগিতা।খোলা আকাশের নীচে, প্রকৃতির কোলে, কচিকাঁচাদের কলরবে তখন সত্যিই এক আনন্দমেলার অনুভূতি। আমাদের মনে করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের কথা, যা আজও ভীষন প্রাসঙ্গিক।

জলঙ্গী নদী বাঁচাতে উপস্থিত মানুষেরা এরপর শুরু করেন স্বচ্ছতা অভিযান। খেয়াঘাট থেকে একে
তোলা শুরু হয় প্লাস্টিক, ফুলের মালা,মাটির ঘট, ইত্যাদি আবর্জনা। বেশ বড় রকমের প্রতিমার কাঠামোও তোলা হয় নদীবুক থেকে। নদী বাঁচাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মানুষের মুখে তখন হেঁইও মারো মারো টান রব।

সীমা সুরক্ষা বাহিনী শুধুমাত্র দেশের সীমানা পাহারা দেয় তা নয়, ওরা আজ দেশের পরিবেশ নিয়েও চিন্তিত। গতকালের নদী ঘাট স্বচ্ছতা অভিযানে ও নদী পাড়ে বৃক্ষরোপণে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন বাহিনীর জওয়ানেরা। সীমা সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে অন্যমাত্রা দেয়।


সবশেষে মৎস্যজীবীদের হাত দিয়ে মাছের চারা ছাড়া হয় জলঙ্গি নদীতে। উদ্যোক্তারা এই অনুষ্ঠানের নাম রেখেছিলেন “মীন মঙ্গল”। দিনে দিনে বাড়ছে জলঙ্গির দূষণ তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলচর জীবেরা। এই প্রতীকী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোথাও যেন তার প্রতিবাদ জানানো হয়।
দৈনন্দিন অবহেলায় ক্রমাগত ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে প্রকৃতি। এখনই সচেতন না হলে আর বাঁচানো যাবেনা এই পৃথিবীকে। নাগরিক সমাজ এগিয়ে এসেছে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে, এখন অপেক্ষা প্রশাসনের তরফে সাহায্যের।

Leave a Reply