মলয় দে নদীয়া:- দেবাদিদেব মহাদেবের মাথায় থাকেন মা গঙ্গা। কথিত আছে, পুণ্য সলিলা মা গঙ্গা এতটাই পবিত্রা, মহাদেব তার জটের মধ্যে দেবী গঙ্গাকে ঠায় দিয়েছেন।দুদিন আগেই হয়ে গেল সেই গঙ্গায় পিতৃ পুরুষের তর্পণ, আসন্ন ভোট উপলক্ষে, সব দলের রাজনৈতিক প্রচারকার্য চোখে পড়েছে, তবে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেখা যায়নি । গঙ্গা ক্রমশ ভয়াল ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে, ভিটেমাটি ছাড়া করেছে হাজার হাজার মানুষকে। তাদের মধ্যেই পড়েন,গবারচড়ের সাতাশটি পরিবারের প্রায় শ’খানেকের বেশি মানুষ। সেই সব মানুষদের একসময় ভিটে ছিল, ঘর ছিল,ছিল স্বপ্ন, এবং অবশ্যই ছিল প্রচণ্ড মনোবল। কঠিন পরিশ্রম করে নিজের সন্তান পরিবার বাবা-মাদের দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করে দিতে ছিলনা তাদের কোন ভয়। কিন্তু রাতের ঘুমটাও কেড়ে নিয়েছে ! হারিয়েছে তাদের সবকিছুই। তাই আজ তারা নিঃস্ব,নিরাশ্রয়।ভাঙ্গন রোধ করার পাকা ব্যবস্থা কেউ করেনি।ওই সাতাশটি পরিবারের লোকজন এখন পুতুলখেলার শিকার। ভাবেনি প্রশাসনের ঘুম। আজ থেকে মাস ছয়েক আগে আগের মতই ভাঙ্গনের শিকার হয়ে যাওয়া ওই পরিবারের লোকজনের পুরসভা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে থাকার জন্য খুলে দেয়া হয়েছিল গবারচড় প্রাথমিক স্কুলের গেট। দু’চারদিন ছিড়ে-মুড়ি শুকনো খাবার দিয়ে নাম কিনেছিলেন এক-আধ জন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রী। এরপরে ওই পরিবারগুলোর ৩৭ টি ছেলে- মেয়ে কিভাবে আছে, সঙ্গে পরিবারের অন্যরাও খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছেন কি,কেউই খোঁজ নেননি বলে অভিযোগ বাস্তবের মুখোমুখি হওয়া ওই পরিবারের লোকজনের।কিন্তু খোঁজ পড়েছে এবার।
শান্তিপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের জন্য এবার ভোট গ্রহণ কেন্দ্র করার তাগিদে স্কুলটি দরকার। এত দিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে কারোর মাথা ব্যথা ছিল না। কিন্তু এবার যে ওদের ছেড়ে দিতে হবে ওই স্কুল। ইতিমধ্যেই মৌখিকভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের স্কুল ছাড়ার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। এবার ওরা করবেন কি? তারই মধ্যে এসে গেল বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপূজা। ওই স্কুলের সামনেই দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে, ভাঙ্গন কবলিত কর্মহীন পরিবারগুলির শিশুরা মনমরা, তাদের নতুন জামা কোথায় ? কঠিন বাস্তব টি বোঝাতে পারছেন না অভিভাবকরা । শান্তিপুরের আগমেশ্বরী পুজো কমিটি সার্বিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সেই সব মানুষদের কথা ভাবেন, ভাবেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। হতদরিদ্র সেইসব পরিবারের ছেলে মেয়েদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পুজোর সময় তারা তাদের নতুন পোশাক দিয়ে থাকেন দীর্ঘদিন ধরেই। সারাবছর নিরলস ভাবে প্রতিনিয়ত কাজের সুবাদে এ ধরনের মানুষ খুঁজে বের করতে পারে একমাত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । তাই শান্তিপুরের ১৭ টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের এবারও তারা দিয়েছেন দায়িত্ব অর্পণ করে, সেই সব ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফোটাতে পোশাক বিতরণের জন্য। শান্তিপুরের প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজনের হাতে কুড়িটি ছেলেমেয়ের জন্য পোশাক দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক কেউ গিয়েছেন ইটভাটায় কেউবা আদিবাসী প্রত্যন্ত গ্রামে । প্রতিবন্ধন বেছে নিয়েছে ভাঙ্গনকবলিত কর্মহীন পরিবারের খুদেদের মুখে হাসি ফোটানোর। কিন্তু গবারচড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী শিবিরে ওইসব পরিবারদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সংখ্যা মোট ৪২ । কুড়ি জন পেলে বাকিরা তাকিয়ে থাকবে,তা কী হয়? তাই সেই সব বাচ্চাদের নতুন পোশাক দেওয়ার দায়িত্ব পাওয়া শান্তিপুরের বিশেষভাবে সক্ষমদের পাশে থেকে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রতিবন্ধন’-এর সঙ্গে যুক্ত সকল সদস্যরা শারীরিক বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে জয় করে, অতি কষ্টে জোগাড় করেছে। কুড়ি বাদে বাকিদের জন্য নতুন বস্ত্র এ বিষয়ে সমাজের সহৃদয় মানুষের সহযোগিতা নিয়েছেন তারা ।’প্রতিবন্ধন’-এর সভাপতি সুজন দত্ত জানিয়েছেন,’ সব বাচ্চার মন একই। অন্তত সবাই যখন একই অবস্থার দাঁড়িয়ে। মা দূর্গা আসছেন। সেই সময় অনেক কষ্টে থাকার পরে তাদের মধ্যে কেউ কেউ পেয়ে যাবে নতুন পোশাক, আর বাকিরা পাবে না তা কি হয়? তাই কষ্টে সৃষ্টে তাদের জন্য আমরা জোগাড় করেছি। খুব ভালো লাগছে তাদের সবার হাতে নতুন পোশাক তুলে দেওয়ার জন্য।
নতুন পোশাক পরে খুশি কচিকাঁচারা। মা আগমেশ্বরীর কৃপায় এবং প্রতি বন্ধনের প্রচেষ্টায় উৎসব হয়ে উঠলো সার্বিক।