TGT বেতনক্রম ও CAS সুবিধার দাবিতে কলকাতার গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের আলোচনা সভা।

Social

৭ই ডিসেম্বর,২০১৯, শিয়ালদহ:
কলকাতার সরকার পোষিত বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ সর্বভারতীয় স্তরে প্রচলিত টিজিটি ( Trained Graduate Teacher) বেতনক্রম এবং Career Advancement Scheme এর দাবিতে ‘বৃহত্তর গ্রাজুয়েট টিচার্স আসোসিয়েশন’ (BGTA) এর নেতৃত্বে শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন *টাকি মাল্টিপারপাস বয়েজ্ হাই স্কুলে* এক সভার আয়োজন করা হয়। তাদের দাবি সর্বভারতীয় স্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১ লা জানুয়ারী, ২০০৬ থেকে গ্রেড পে ৪৬০০ টাকা ধরে Pay fixation করতে হবে সেই সঙ্গে রাজ্যের সরকারি বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের সঙ্গে সমহারে ৩ বার CAS এর সুবিধা দিতে হবে। কেন্দ্র থেকে রাজ্য সব ক্ষেত্রেই NCTE র নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। BGTA কলকাতা জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শিক্ষক *নির্মল কুমার মন্ডল* বলেন , “পশ্চিম বঙ্গে সরকার পোষিত/সাহায্য প্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে নিযুক্ত স্নাতক শিক্ষক-শিক্ষিকাগন বিগত দুই দশকেরও অধিক কাল যাবৎ সর্বভারতীয় স্তরে প্রচলিত স্নাতক-শিক্ষক বেতনক্রম থেকে বঞ্চিত। পশ্চিম বঙ্গে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর প্রনীত রোপা রুলস্ ২০০৯ এ স্নাতক শিক্ষকদের বেতনক্রম ধার্য্য করা হয় : ৭১০০—৩৭৬০০ টাকা, গ্রেড পে- ৪১০০ টাকা এবং পে ফিক্সেশন করে প্রারম্ভিক মূল বেতন হয় ১২৭৫০ টাকা। আর স্নাতকোত্তর শিক্ষক- বেতনক্রম ধার্য্য করা হয় ৯০০০—৪০৫০০ টাকা, গ্রেড পে ৪৮০০ টাকা এবং পে ফিক্সেশন করে প্রারম্ভিক মূল বেতন হয় ১৫৯৬০ টাকা। উভয়ের প্রারম্ভিক মূল বেতনের পার্থক্য দাড়ায় ৩২১০ টাকা। ঐ একই সময়কালে সর্বভারতীয় স্তরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষকদের অভিন্ন বেতন কাঠামো দেওয়া হয়:- ৯৩০০——৩৪৮০০ টাকা, এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষকদের গ্রেড পে হয় ৪৮০০ টাকা আর স্নাতক শিক্ষকদের গ্রেড পে হয়- ৪৬০০ টাকা। উভয়ের প্রারম্ভিক মূল বেতনের পার্থক্য দাঁড়ায় ১৮১৫০-১৭১৪০=১০১০ টাকা ( যেটা পঃবঙ্গে ৩২১০ টাকা )। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় এই যে পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা দপ্তর স্নাতকোত্তর শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় স্তরের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বেতন কাঠামো (৯০০০—-৪০৫০০ টাকা) তৈরি করে তাদের গ্রেড পে ধার্য করেন ৪৮০০ টাকা যা সর্বভারতীয় স্তরে ৪৮০০ টাকাই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পঃ বঙ্গে স্নাতক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক ভাবে নিম্নতর বেতনক্রম (৭১০০—-৩৭৬০০) গ্রেড পে ধার্য্য করা হয় ৪১০০ টাকা। উল্লেখ্য সর্বভারতীয় স্তরের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে পশ্চিমবঙ্গে রোপা রুলস্ ২০০৯ এ স্নাতক শিক্ষকদের 13(a ) স্কেল হওয়া উচিত ছিল যার প্রারম্ভিক মূল বেতন হওয়া (Band Pay +GP ১০২৮০+৪৬০০) মিলে ১৪৮৮০ টাকা।“
নির্মল বাবু আরও জানান, “পশ্চিমবঙ্গে সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে কর্মরত স্নাতক শিক্ষকদের সমগ্র কর্মজীবনে তিন বার (৮, ১৬ এবং ২৫ বছরে) ক্যারিয়ার অ্যাডভান্সমেন্টের সুবিধা (CAS) প্রদানের মাধ্যমে উচ্চতর বেতনক্রমে উন্নীত করা হয়। আর সরকার পোষিত/সাহায্য প্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে কর্মরত স্নাতক শিক্ষকদের ঐ সুবিধা সমগ্র কর্মজীবনে মাত্র একবার (১৮ বছরে ) দেওয়া হয়। যার ফলে সরকার পোষিত/সাহায্য প্রাপ্ত বিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন”। এদিনের সভায় প্রচুর সংখ্যক শরীর শিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন। তাদের দাবি তাদের নর্মাল সেকশনে নিয়োগ হওয়া সত্ত্বেও সরকার বেআইনি ভাবে তাদের Upper Primary section এ দেখাচ্ছে। যেটা তারা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না বলে জানান। এটা বন্ধ না হলে তারা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানাবেন বলে হুশিয়ারি দিচ্ছেন। যদিও বর্তমানে সরকার ওয়েব স্টাফ প্যাটার্নের কাজ স্থগিত রেখেছে ।
সভায় উপস্থিত সংগঠনের *রাজ্য সভাপতি ধ্রুবপদ ঘোষাল* বলেন, “হাইকোর্ট ইতিমধ্যে দু দশক ধরে চলে আসা বেতন বৈষম্য দূরীকরণের জন্য পে কমিশন ও সরকার পক্ষকে আদেশ দিয়েছেন কিন্তু তার কোনো প্রতিফলন আমরা সদ্য প্রকাশিত পে কমিশন রিপোর্ট এ পাইনি। আমাদের দাবি আদালতের নির্দেশ মেনে গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের বেতন বঞ্চনা দূর করে শিক্ষা দপ্তর দ্রুত রোপা রুলস ২০১৯ বের করুন।এছাড়াও সাম্প্রতিক web based staff pattern এর নামে Normal section এ নিযুক্ত গ্রাজুয়েট শিক্ষকদের upper primary section এ দেখানো হচ্ছে যেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। ধ্রুব বাবু আরো বলেন, কোর্টের রায় কে তাচ্ছিল্য করে সরকার আমাদের আর একবার চুড়ান্ত বঞ্চনার শিকার বানাতে চাইছে। তাই শিক্ষা মন্ত্রীর আশ্বাস ও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রীর বলা “Under process” যদি প্রসেসড না হয় তাহলে বিজিটিএ পশ্চিম বঙ্গের বুকে অকল্পনীয় শিক্ষক আন্দোলন শুরু হবে।” সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এক ফোনালাপে জানান, ” আমরা সহনশীলতার শেষ ধাপে এসে পৌঁছেছি, আশা করছি মন্ত্রী মশাই তাঁর কথা রাখবেন। অন্যথায় আমরা কি করব তা আমরা স্থির করেই রেখেছি। এখন শুধু কয়েক দিনের অপেক্ষা।”