পথের পাশে নৈশ প্রহরী সারমেয় দের খাবারের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষকে বার্তা একদল যুবকের

News

মলয় দে, নদীয়া:- প্রতিদিন সকালে দশটার সময় ব্যাগ হাতে বাজারে, তবে আম লিচু ফল মূল নয়! উচ্ছে ডাটা লংকা পটল ঝিঙে আনাজও নয়। স্রেফ চিকেন এবং মটন কিনে সোজা পাড়ার মোড়ে। এরপর রাস্তায় রান্নার তোড়জোড় ৩০০ জনের, আর তা পাহারা দিচ্ছে গুটিকতক সারমেয়। মেনু! মটন এবং চিকেন বিরিয়ানি। তারপর টোটো করে হোম ডেলিভারি!

না …না… কোন অনুষ্ঠান বাড়ি নয়! হোম ডেলিভারি হোটেল সার্ভিসও নয়। মায়ের বকুনি খেয়ে, বাড়ির বাসন, রান্নার গ্যাস নিয়ে বাবার অন্ন ধ্বংস করে ,ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো! এবার খোলসা করেই বলি, লকডাউনে বন্ধ বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ চায়ের দোকান খাবারের দোকান! অথচ বেঁচে যাওয়া উদ্বৃত্ত নষ্ট হওয়া বিভিন্ন খাবারের অংশ খেয়েই জীবন যাপন করতো রাতের প্রহরীরা অর্থাৎ সারমেয়রা। লকডাউনে কর্মহীন তারা হয়নি ঠিকই তবে তাদের প্রভুরা গৃহবন্দি! বন্ধ রুজি রোজগার, নিজেরাই চলছেন এর ওর সহযোগিতায়! পথের ধারে সারমেয়দের প্রভুভক্ত স্বপ্নালু চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় খিদে পেয়েছে ওদের! তা বলতেও পারেনা, সারাদিন যেমন তেমন! সারারাত পাহারা দেওয়ার পরিশ্রমটা কম নয়! খালি পেটে তো আর পরিশ্রম করা যায় না। বড় গোস্বামী পাড়ার রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য রাজু, অরুন, ছট্টি, কেলে, বিশু, রাজা, বাপি, বাবাই, রাকেশ এ রকমই বেশ কয়েকজন বন্ধুর উদ্যোগে ১৩ দিন আগে থেকে পথের সারমেয়দের আহারের ব্যবস্থা চালু হয়েছিলো।

রাত দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে, টোটো করে হোম সার্ভিস দিতে শুরু করে স্টেশন থেকে মতিগঞ্জ হয়ে থানার মোড় পর্যন্ত ফিরে আসে হাসপাতালের সামনে দিয়ে বাইগাছি মোড় পর্যন্ত, রাস্তার পাশে থাকা প্রায় ৩০০ সারমেয়দের।

প্রধান উদ্যোক্তা রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য জানান, কাজটা এত কঠিন বুঝিনি আগে,ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়ায় বাহবা দেওয়া দুই-একজন সহযোগিতা করলেও বেশিরভাগই ওই কমেন্ট বক্স পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। ফলে, রান্নারগ্যাস, চিকেন মটন চাল জোগাড় করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। আবারও ঘোষণা হয়েছে এই লকডাউন ১৫ দিনের জন্য। জানিনা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারবো কিনা! তবে কষ্ট হয়, এইভেবে আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকে , পেট পূরণের জন্য! নিজের বিবেক কে উত্তর দিতে পারছি না, আমরা কি এতটাই স্বার্থপর সামান্য খরচ সকলে জোগাড় করতে পারব না?

শুধু শান্তিপুর বড় গোস্বামী পাড়া নয়, পাড়ার অলিতে-গলিতে এইরকম নিয়মিত পরিষেবা দিয়ে যাওয়া , বহু ছেলেমেয়েদের প্রতি রইল আমাদের সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা। অনুরোধ থাকলো আপনাদের কাছে, ওদের সহযোগিতার জন্য।

Leave a Reply