মলয় দে নদীয়া:- ভ্যাকসিনের নতুন সরকারি নির্দেসের খবরটি শুনে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সে বিজলী প্রামাণিক। শুক্রবার দুপুরে নদীয়ার শান্তিপুরের শ্যামবাজারের বাড়িতে বসে । বললেন,’ আমাকে তো হাসপাতাল থেকে বলেছিল, ৪৩ দিন পরেই দ্বিতীয় ডোজ দেবে।কিন্তু এখন শুনছি,তা হবে না।আমি তো এর কারণ কিছুই বুঝতে পারছিনা।অবশ্যই তা নিয়ে একটু চিন্তা হচ্ছে।পরে আবার দেবে তো?’ আবার শান্তিপুরের পুরস্টেডিয়ামের কাছের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন,’ এর কারণটা কী, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।ভ্যাকসিন তো সেই একই।তাহলে দেশের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কী করে? নাকি যোগান দিতে পারছে না বলে ইচ্ছাকৃতভাবে দিন বাড়ানো হল। মানুষ তো প্রচন্ডভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’
যদিও ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার জন্য বিগত চার দিন ধরে লাইন দিয়েও ফুলিয়ার গোস্বামী পাড়ার গৌর ঘোষের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি।শুক্রবার তিনি শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল একটু বেলা করে খোঁজ নিতে গিয়ে শোনেন, ভ্যাকসিন দেওয়াই আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।আসলে পেশায় চাষী গৌর ঘোষের ৬০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এরপর তিনি ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কী না, তা নিয়ে গত দু’দিন ধরে ছিলেন চিন্তায়।সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে দেওয়ায় তার পক্ষে কিছুটা সুবিধা হল ঠিকই।তবে গৌর ঘোষের দুশ্চিন্তা এখনও পুরোপুরি কাটেনি।বললেন,’ ৮৪ দিন পরে তো আরও বেশি ভিড় হবে।তখন আবার ভ্যাকসিন পাব তো?’
গত দুদিন ধরেই কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল, রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল, কল্যানীর জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে লাইনে দাড়িয়েছেন।তাদের মধ্যে অনেকেই পাননি ভ্যাকসিন।কোথাও কোথাও আগের দিন রাত থেকেই লাইন দিয়েছেন অনেকেই।কিন্তু শুক্রবার ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গিয়ে তারা জানতে পেরেছেন, আপাতত বন্ধ থাকবে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া।শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যথারীতি বৃহস্পতিবার রাত থেকেই লাইন দিয়েছিলেন প্রচুর মানুষ।অন্যদিনের মতো শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুধবার বিকেলে হাসপাতালের বাইরে টাঙিয়ে দিয়েছিল নোটিশ।সেক্ষেত্রে রাতের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের সময়ের ব্যবধান বাড়ানোর সরকারি নির্দেশের খবর পায়।যদিও ততক্ষনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আর করণীয় কিছু ছিল না।ওই হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন,’ যারা ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন,মূলত তাদের কথা ভেবেই আমরা তাদের না করিনি।তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে।না দিলে হয়ত একটা অশান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হত। তবে আমাদের কাছে যা ভ্যাকসিনের মজুদ ছিল, সেটা এবার শেষ হয়ে গেল।এবার ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ রাখার নোটিশ টাঙ্গানো হবে।’ যদিও কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসা মানুষদের মুখেই জানিয়ে দিয়েছে, ৮৪ দিন পরে আসার কথা।আসলে সরকারি নতুন নির্দেশের কথা অনেকেরই জানা নেই। তাই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে অনেকেই। পরে আবার তারা আদৌ ভ্যাকসিন পাবেন কী না, কারও কারও মনে জেগেছে সেই প্রশ্ন।