নিউজ সোশ্যাল বার্তা, ২৬শে নভেম্বর ২০১৯, শঙ্খ শুভ চক্রবর্তী: প্রাচীন ভারতীয় ধর্মাচার ও পরিবেশভাবনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রত্যেকটি ধর্মাচারের উপর ঋতুর প্রভাব লক্ষ্যনীয়। চাতুর্মাস্য ব্রত এমনই এক প্রাচীন ভারতীয় ধর্মাচার। চাতুর্মাস্য অর্থাৎ চারমাস ব্যাপী পালনীয় এক ব্রত। এটি হিন্দু বৌদ্ধ এবং জৈন এই তিনটি সম্প্রদায়ের মধ্যেই প্রচলিত। বর্ষা ঋতুর সময় এই ব্রত পালনের বিধি।সনাতন ধর্মানুযায়ী এই ব্রত শুরু হয় আষাঢ় মাসের শুক্লা একাদশী অর্থাৎ শয়ন একাদশীর সময় এবং শেষ হয় কার্তিক মাসের কার্তিক মাসের শুক্লা একাদশী অর্থাৎ প্রবোধিণী একাদশীর সময়। হিন্দু শাস্ত্র মতে এই চার মাস সৃষ্টির পালনকর্তা শ্রীবিষ্ণু ক্ষীর সাগরে যোগনিদ্রায় শায়িত থাকেন। সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী সহ সকলের এই চার মাস সমস্ত রকম পদযাত্রা নিষিদ্ধ।চাতুর্মাস্য ব্রত চলাকালীন পর্যটন বন্ধ রেখে একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে শুধুমাত্র অধ্যয়ন ও জনসেবা করা বিধি।কিন্তু কেন নিষিদ্ধ হল পর্যটন,পদযাত্রা ? যেখানে ঋগ্বেদের মূলমন্ত্রই “চরৈবেতি”।এখানেই সামনে আসে পরিবেশ ভাবনা।বর্ষাকাল স্বাভাবিকভাবে বৃক্ষ,লতাগুল্মো সহ শত শত কীট পতঙ্গের বংশবৃদ্ধিকাল। চার মাসের এই অন্তরাল প্রকৃতিকে সুষ্ঠভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। চাতুর্মাস্য তে আরেকটি অবশ্যপালনীয় রীতি হলো হলো পবিত্র নদীতে পুণ্যস্নান।এর মাধ্যমে নদীগুলির বর্ষার সময়ে জলস্ফীতি সহ প্লাবনভূমির নিবিড় পর্যবেক্ষণ সাধিত হত।
জৈন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চাতুর্মাস্য প্রথা প্রচলিত আছে।জৈন ধর্মগুরু ভদ্রবাহু লিখিত(খ্রিস্টীয় প্রথম শতক) জৈন ধর্মগ্রন্থ “কল্পসূত্র” এ এই প্রথার উল্লেখ আছে। জৈন সন্ন্যাসীরা বর্ষাকালে অগণিত জীবজন্তুর প্রাণ রক্ষার্থে তীর্থযাত্রা বন্ধ রাখার পাশাপাশি মৌনব্রতও রাখেন।
একই রকম ভাবে বৌদ্ধদের মধ্যেও এই প্রথা প্রচলিত।স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ ,মহারাজ বিম্বিসার কে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করে রাজগীরের নিকট রাজকীয় উদ্যানে অবস্থান করে চাতুর্মাস্য ব্রত পালন করেন।
পরিবেশ ভাবনা ছাড়াও এই ধর্মাচারের সাথে স্বাস্থ্যভাবনাও জড়িত আছে। সে এক অন্য অবকাশে বলা যাবে।