আধুনিকতার যুগেও ভাঁটা পড়েনি তালের পাখার ! জানেন কি পাখার ইতিহাস

Social

মলয় দে নদীয়া :- এশিয়া ও আফ্রিকায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে হাতপাখার প্রচলন দেখা যায়। হাডুডু থেকে জমিদার বামুন ঠাকুর থেকে গাড়োয়ান প্যাচপ্যাচে গরমের থেকে প্রাণ জুড়াতে বাঁশের কঞ্চি , ঘাস ,কাপড়, চুলের ফিতা ,সুতো, বেত, খেজুর পাতা ,নারকেল পাতা, পাখির পালক, সুপারির খোলা, কলা গাছের বাকল, মোটা কাগজ পশুর চামড়া নানা উপাদান দিয়ে নির্মিত বিভিন্ন ধরনের হাতপাখার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তালপাতা। ধরনের বিভিন্ন রকম হাতপাখা সংরক্ষিত আছে আজও।প্রাচীন যুগে রাজ সিংহাসনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা যেতো বিরাটাকার পাখা, অলংকারের মতোই মহিলাদের হাতে পাখা আজও চীন-জাপানের ফ্যাশন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সুলতানদের দরবারের শোভা পেত নানান কিসিমের চামর। মুসলিম পরম্পরায় মুশকিল আসানের জন্য হাতে চামর দোলানোর স্মৃতি আজও আছে। হিন্দু পুজো অর্চনার রীতিতেও চামর বা তালপাতার পাখার বাতাস দিয়ে সন্তুষ্ট করা হয় আরাধ্য দেবতা কে। অষ্টম শতকে আরবে দড়ি টানা পাখা ব্যবহার হতো তবে ঐতিহাসিক এইচ ই বাস্টিডের লেখা একটি গ্রন্থ থেকে জানা যায় পর্তুগীজদের হাত ধরে ১৭৮৪ থেকে ১৭৯৮ সালের মধ্যে কলকাতায় টানা পাকা আবির্ভাব ঘটে। ১৮০০ সালে লর্ড ওয়েলেসলি সেন্ট জনস চার্চ শহর শহরের অন্যান্য গির্জায় টানা পাখার ব্যবস্থা করেন।কাছারিতে আর্দালি নামক পোস্টে এদেশের অনেকেই চাকরি করতেন শুধুমাত্র বাতাস করার জন্য।সম্ভ্রান্ত ইংরেজ পরিবারের খাবার এবং শোয়ার ঘরে এ ধরনের কাজে নিযুক্ত থাকতেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কানে খাটো বা বধির মানুষ, অন্দরমহলের গোপনীয়তা বজায় রাখার কারণে হয়তো!

কলকাতায় প্রথম বিজলী বাতি জ্বলে! তারপরে মাথার উপর ঘোরে বৈদ্যুতিক পাখা। এরপর এয়ার কুলার,এয়ার কন্ডিশনার, নানা যন্ত্রের আবির্ভাবে হাতপাখা প্রায় লুপ্ত সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে। তবে প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারেই অন্তত একটি করে হলেও, শীতের কাঁথা বর্ষার ছাতার মতন একটা তালপাখা হাতছাড়া করতে চান না কেউই! নিয়মিত অভ্যাস জনিত কারণে বেশ কিছুদিন বাদে হলেও গ্রীষ্মের দাবদাহে ক্ষনিকের লোডশেডিংয়ে গলদঘর্ম হওয়ার চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা নিয়েছেন তারা।
এ রকমই একটি দৃশ্য দেখা গেল নদীয়ার ধুবুলিয়া এলাকায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ বিড়লা পুর এলাকার হাতপাখা ব্যবসায়ী শেখ নাজিম এবং আফসার আলী মোল্লা জানান দীর্ঘদিন ধরেই তারা এ ব্যবসার সাথে যুক্ত। বজবজে তাদের তালপাতার থেকে পাখা তৈরির কারখানা। মেদিনীপুর বাঁকুড়া বীরভূম বিভিন্ন জায়গায় এখনো যথেষ্ট পরিমাণে বিক্রি হয় তালপাতার পাখা। প্রতিদিন প্রায় ত্রিশ চল্লিশ হাজার তালপাখা নদীয়ার ধুবুলিয়ায় পৌঁছায়! সেখান থেকেই গৌহাটিসহ উত্তরবঙ্গের  শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর , মালদা মুর্শিদাবাদের পৌঁছে যায় বিক্রির উদ্দেশ্যে।

Leave a Reply