মলয় দে, নদীয়া :-তৎকালীন বঙ্গের শ্রী হট্ট, বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেট জেলা র নবগ্রাম লাউড় গ্রামে বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে ৮৪০ বঙ্গাব্দে ইংরেজি১৪৩৪ সালের মতভেদে ২৬ শে জানুয়ারি, আবার শাস্ত্রমতে নানা তথ্য অনুযায়ী আজ অর্থাৎ উনিশে ফেব্রুয়ারি, উপমহাদেশের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব দার্শনিক ও ধর্মবেত্তা শ্রীঅদ্বৈত আচার্য্য জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে শ্রীচৈতন্যদেবের পিতা মাতা জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর দীক্ষাগুরুও ছিলেন।
মা-বাবা দেওয়া নাম ছিল কমলাক্ষ। ছাত্র অবস্থায় মাত্র ১২ বছর বয়সে সংস্কৃত ভাষায় কলাপ ব্যাকরণ রচনা করে সারা বিশ্বের পন্ডিত মহলে সাড়া ফেলে দেন । ছোট বয়সের এই
ঘটনার পরবর্তিতেতে নদীয়ার শান্তিপুরের দক্ষিণ দিকে গঙ্গাতীরে “উপকারিকা” নামক একটি কুটির স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বলেই জানা যায়। এছাড়াও সুরধুনি নদী তীরবর্তী বাবলা আম্রকুঞ্জে তিনি দীক্ষাদান এর উদ্দেশ্যে একটি কুটির নির্মাণ করেন, যা আজ অদ্বৈত-পাট নামে বিখ্যাত। সেখানে তার প্রিয় শিষ্য শ্রীচৈতন্যদেব দীক্ষা পরবর্তী সময়ে দশ দিন ছিলেন এবং মাঝে মাঝে আসতেন বলে বৈষ্ণব ইতিহাস ইত্যাদি হতে জানা যায়।
শান্তিপুর পার্শ্ববর্তী ফুল্লবাটি বর্তমান ফুলিয়ার শান্তাচার্য্য পণ্ডিতের কাছে চতুর্বেদ শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে বেদপঞ্চানন উপাধি লাভ করেন অদ্বৈত আচার্য । দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণকালে পণ্ডিত শ্রী মাধবেন্দ্র পুরী সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তিনি কমলাক্ষের শিক্ষা ও জ্ঞান দেখে তাকে দীক্ষা প্রদান করেন এবং নাম দেন অদ্বৈত আচার্য।
সেসময় পন্ডিত সমাজের গোঁড়ামির রক্তচক্ষু, অন্যদিকে রাজশাসন এর বিধি নিষেধ ভেঙে সমাজের বহু অনাচার রুখে ছিলেন তিনি। জোর করে বা চাপিয়ে দিয়ে নয়, ধর্মের প্রকৃত মানে বুঝে মনের অন্তর্নিহিত ভক্তি ও জ্ঞান থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি। তাই তিনি সমাজ সংস্কারকও বটে । আবার একদিকে নবদ্বীপে কাজীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, তিনি তাই তিনি বিপ্লবী। অন্যদিকে বিধর্মী যবন হরিদাস কে দীক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিষ্যত্ব প্রদান করেন। এমনকি তাঁর মাতৃশ্রাদ্ধে হরিদাসকে যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ করার কারণে নিমন্ত্রিত বৈষ্ণবগণ তাঁর গৃহ হতে ভোজনে অস্বীকৃত হয়ে ফিরে যান কিন্তু তবুও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন গোঁড়ামির বিরুদ্ধে।
শ্রীচৈতন্যকে অবতার রূপে আবির্ভাব ঘটানও তিনি। শান্তিপুরের রাস যাত্রা প্রবর্তন করেন তিনি।১২৫ বছর বয়সে দেহত্যাগ করে মঙ্গলালোকে চলে যান এই কালপুরুষ ।
রেখে যান বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনের প্রামাণ্য পথ-পুথিগুলিকে ঘটনাবলীরূপে ।