মলয় দে নদীয়া:- রামায়ন শুধু মাত্র একটি কাব্য নয় মহাকাব্য! সম্প্রতি হিন্দু সনাতনী রীতিনীতি ফেরাতে কেন্দ্রের সরকার যখন তৎপর, মহাসমারোহে উদ্বোধন হয়েছে অযোধ্যায় রাম মন্দির। অথচ বাঙালি তথা বঙ্গবাসি এবং সনাতনী হিন্দু ধর্মের আবেগ কবি কৃত্তিবাস রচিত রামায়ণের মূল পান্ডুলিপি আজও ফ্রান্সে। উপেক্ষা আর অবহেলায় ভগ্ন দশা কৃত্তিবাসী রামায়ণ রচয়িতার রচনাস্থল নদীয়ার ফুলিয়ায়। অথচ শুধু তার নিজস্ব পান্ডুলিপি নয়, রামায়ণ সম্পর্কিত বিভিন্ন ভাষার লেখক সাহিত্যিকদের এত সমাহার ভারতবর্ষের অন্য কোন লাইব্রেরীতে আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ । অথচ গবেষক হোক কিংবা ছাত্রছাত্রীরা আজ কৃত্তিবাস এবং রামায়ণ সম্পর্কিত বহু অজানা তথ্য থেকে বঞ্চিত রয়েছেন শুধুমাত্র সরকারি উদাসীনতার কারণে।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে কৃত্তিবাসের স্মরণে ফুলিয়ার বয়রায় একটি গ্রন্থাগার তথা কমিউনিটি হল তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার।১৯৬৭ সালে গ্রন্থাগারটি খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। সেখানে ১৪ টি ভাষায় রামায়ণের অনুবাদ রয়েছে। আছে কৃত্তিবাসের স্বহস্তে রচিত রামায়ণের পান্ডুলিপির সেই ফটোকপি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ, বাংলায় রামায়ণের রচয়িতা কৃত্তিবাস ওঝার স্মৃতিতে তৈরি সেই লাইব্রেরিও বর্তমানে অবহেলিত। লাইব্রেরীর আশেপাশে নোংরা আবর্জনায় ভর্তি। অবহেলার চিহ্ন চারিদিকে। সপ্তাহে মাত্র দু’দিন, শুক্র ও শনিবার ঐ লাইব্রেরী ও সংগ্রহশালা সর্বসাধারণের জন্য খুলে রাখার কথা হলেও কর্মী সংকটে তা বন্ধ বহুদিন।
জানা যায় শেষ ২০০৯-১০ সাল নাগাদ একজন গ্রন্থাকারী নৈশ প্রহরী এবং মালি পদে করতেন তিনজন এরপর থেকে নিয়োগ নেই । তারা জানাচ্ছেন, শুধু এই গ্রন্থাগার নয় সারা বাংলায় একই চিত্র।
আর এই উদাসীনতা নিয়ে কেন্দ্ররাজ্য যেমন একে অন্যের উপর দায় ঠেলছেন ঠিক তেমনি স্থানীয় শাসক বিরোধী রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন কেন্দ্র সরকার ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে সনাতনী ফেরানোর কথা বলে তাহলে তারাই বা কি করেছে? রাজ্য সরকার তো লাইব্রেরী স্থাপন করেছে এরপর দরকার কেন্দ্রীয় অনুদান।
অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সারা রাজ্যে গ্রন্থাগার কর্মী নিয়োগের অভাবে উঠে যাচ্ছে, বর্তমানে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এ বাংলায় সনাতনীদের নিয়ে চিন্তিত নয় তাই অবহেলায় বহু প্রাচীন ইতিহাস এবং ধর্মের নথি গুরুত্বপূর্ণ লেখনি বই এসব সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে।
তবে রাজনীতি যাই হোক, ভারতবর্ষের বিখ্যাত এত বড় মাপের একজন কবি এবং বাঙালির আবেগ , বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ও গরিমা র বিপুল সম্ভার এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বিশেষত গবেষকদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছেনা এবং তা অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে বলে যথেষ্ট চিন্তিত সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। তবে হেলদোল নেই কোন সরকারের।