মলয় দে, নদীয়া: সরস্বতী পুজোর আগে খাওয়া যাবেনা কুল একথা যেমন শিথিল হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে, ঠিক তেমনই চাষীদের কাছেও দেশি কুলের ধারণা বদলে দিগন্ত খুলেছে নানান ধরনের সুস্বাদু পুষ্টিকর কুলচাষ। এক বিঘা জমিতে ১৮০টি চারা গাছ লাগিয়ে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে প্রত্যেক গাছ থেকে ৪০ থেকে ৭০ কেজি ফল পাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে পোকামাকড় নিধন বা চাষ সংক্রান্ত খরচ খুবই কম! আবার বাজারদর খারাপ নয় ! প্রতি কেজি ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে বলেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন চাষীরা।
অন্যদিকে প্রায় প্রত্যেকেই একদম ছোট্ট বীজ, অনেকটা শাঁসযুক্ত সুমিষ্ট উপকারী এই কুল সারা বছরই আচার হিসেবে এবং এই শীত থেকে গরমে পৌঁছানো পর্যন্ত একমাত্র ফল হিসেবে ভরসা করে কুলের ওপরেই।
শুধু কি স্বাদ! প্রতি ১০০ গ্রাম কুলে ৭৯ কিলোক্যালরি, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, বিপুল খনিজ উপাদানে ভরপুর এই ফলে ক্যালসিয়াম পটাসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
তাই সংক্রমনযোগ্য বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে, যকৃতের নানা রোগের উপশমে, ডায়রিয়া, রক্তশূন্যতা, স্থূলতা বৃদ্ধি, ব্রংকাইটিস, চির তারুণ্য বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ হজমের সমস্যার সমাধানে, ক্যান্সারের অব্যর্থ পথ্য হিসাবে এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। জনশ্রুতি হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের কাছে সরস্বতী পুজো আগে কুল খাওয়ায় বাধার কথা শোনা যেতো একমাত্র, পরিপক্ক না হওয়ার কারণে কাশি হওয়ার জন্য। কিন্তু কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী, লাল সুন্দরী কুল, নারকেলি কুলের মোতো নানান বিদেশি ফলের সংকর প্রজাতিতে তৈরি এই ধরনের কুলে সে সম্ভাবনা নেই! তাই স্কুলে সরস্বতী পুজোর আগেই কুল খেতে বারণ করেন না অভিভাবক থেকে শিক্ষকরা।আর চাষাবাদে? কুলের কূল রক্ষা করতে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা চাষে মনোযোগ দিয়েছে! বেড়েছে কুল খাওয়ার প্রবণতাও।
তবে অন্যান্য বছরের থেকে এই বছরে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় কুলের ফলন একটু কম। শীত দেরী করে পড়েছে ফলে ফলন কম হবে । সুন্দরী,বাউ, আপেল কুলের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করছেন কুলচাষীরা ।