মলয় দে, নদীয়া:-ব্যাকরণ অনুযায়ী, সিংহ চিহ্নিত বা সিংহ প্রধান আসনই হলো সিংহাসন। কথাটা “সিংহ” হলেও ব্যবহৃত হয় ক্লীবলিঙ্গ হিসেবে। সেকালে ব্যাবিলনের রাজা সোলেমান নিজের অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য হাতির দাঁতের তৈরি সিংহাসনটি করে দিয়েছিলেন খাঁটি সোনা দিয়ে। মিশরের পিরামিডের মধ্যে মিলেছিল বহুমূল্য রত্ন দিয়ে মোড়া সোনার সিংহাসন। শুধুমাত্র প্রাচীনকালের নয় বর্তমানেও বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এখনও একটি নির্দিষ্ট দিনে বসেন সোনার সিংহাসনে।
শুধুমাত্র বিদেশেই নয়! সিংহাসনের ইতিহাসে পিছিয়ে নেই ভারতবর্ষও। ৩২টি পুতুল দিয়ে ঘেরা বহু মণিমাণিক্য খচিত সোনার সিংহাসনে বসতেন মহারাজ বিক্রমাদিত্য। ভারতের মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনীর জাহাঙ্গীর নামাতে উল্লেখ আছে আগ্রা নগরীতে তৎকালীন সময়ে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে, সিংহাসনে বসিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পুত্র শাজাহান ও বানিয়েছিলেন পৃথিবী বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন। রামায়ণ মহাভারতেও সিংহাসন দখলের নানা তথ্যই আমাদের জানা! তবে সেরোরাই আজও আছে, নাম পরিবর্তন হয়ে কুর্সি বা চেয়ারের। তবে দেব-দেবীদের সিংহাসনে বসানোর প্রবণতা এখনো কম নয়! অতি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কম রোজগারের মধ্যেও সাধ্যমত সবচেয়ে ভালো সিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করেন আরাধ্য দেবদেবীকে।
হিন্দু ধর্মের পীঠস্থান নদীয়া শান্তিপুরে ধাতব মূর্তি গহনা, নানা উপকরণসহ সিংহাসন বানানোর দক্ষ কারিগর আজও বাংলায় সমাদৃত। রূপোর সিংহাসন নির্মাতা স্বর্ণ-রৌপ্য শিল্পী প্রসেনজিৎ সেনের অপরূপ শিল্পকর্মর হদিস পাওয়া যায়। জানা যায় শান্তিপুরেরই একটি গৃহস্থ পরিবার নারায়নশিলা বসানোর উদ্দেশ্যে একটি রুপোর সিংহাসন বানাতে দেন। শিল্পী তাঁর শিল্প কর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে সেই সিংহাসনটি তৈরি করতে এক কেজিরও বেশি রুপা লেগেছে।