মলয় দে, নদীয়া :-সাধারণ ভাবে ব্যাবসায়ী মহলে ধনতেরাস দিনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । এই বিষয়ে একটি উপাখ্যান বা কাহিনী বর্ণিত আছে , প্রাচীন কালে হেমার রাজার পুত্রের জীবনে একটি অভিশাপ ছিল । সেটি হলো সে বিবাহের চারদিন পরেই সাপের কামড়ে মারা যাবে । এই কথাটি জানার পর তার স্ত্রী সারারাত জেগে থেকে বিভিন্ন প্রকার গল্প ও গান শুনিয়ে রাত্রি অতিবাহিত করেন এবং তাদের মূল দরজার সামনে বিভিন্ন প্রকার ধাতব অলঙ্কার উজাড় করে রাখেন । সেই রাতে যম রাজ তাকে হরণ করতে এলেও সেই অলঙ্কারের জৌলুসে তার চোখ ঝলসে যায় ,আবার সেগুলি অতিক্রম করে যম রাজ তাদের গৃহে পদার্পণ করতেও পারেন না । ওই অলঙ্কারাদির ওপরেই বসে পড়তে হয় যমরাজ কে । পরে যমরাজ সেখান থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন । আর ঠিক পরের দিনই শুরু হয় ধনতেরাস উৎসব ।এদিন লক্ষ্মীর পুজো , গণেশ পুজো এবং অনেকে কুবের পুজোও করে থাকেন ঐশ্বর্যশালী হবার কারণে । আর একই বলা হয় ধনতেরাস । হিন্দি ভাষীদের হিন্দুদের মধ্যে এই প্রচলন খুব বেশি দেখা গেলেও, বর্তমানে বেশ কিছু বছর যাবৎ বাংলায়ও হিড়িক লাগে ধনতেরাস উপলক্ষে। এবছর করনা আবহেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত প্রত্যেকেই আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী স্বর্ণ অথবা রূপার অলংকার গহনা ক্রয় করে থাকেন। বড়োসড়ো বাজেটে মানানসই না হলে নিদেন পক্ষে অন্তত রুপোর পাঁচ দশ কুড়ি গ্রামের সোনা বা রুপার কয়েন কিনে রাখেন অনেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সারা বছরের বিভিন্ন খরচের মাঝে শক্তি তৈরি করার জন্যই সেই আমল থেকে এই প্রথা চলে আসছে। বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি তে ইদানিং হালফ্যাশনের কালীমাতা ,গণেশ, সন্তোষী মা, জগদ্ধাত্রী নানানরকম দেবদেবীর রুপোর মূর্তি অতি কম খরচে পাওয়া যায়। এমনকি থালা ঘটি বাটি গ্লাস চামচ থেকে শুরু করে শোকেসে সাজানোর জন্য নানান রুপোর তৈরি উপাদান কিনতে দেখা যায় ইদানিং। গতকাল রাত ১১ টা পর্যন্ত বিভিন্ন সোনার দোকানে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে সকাল দশটায় দোকান খোলার সময় হলেও, গতকাল সকাল আটটার মধ্যেই স্বর্ণ এবং রৌপ্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত ক্রেতাদের মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য। তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত বা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারীদের কাছে এই দিনের বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই হয়তো অর্থনৈতিক কারণেই। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বিক্রি কিছুটা বেড়েছে । তবে করোনার প্রভাব না থাকলে আরো বেশি বিক্রি হতো বলে তাঁরা জানান ।