বিকাশ চক্রবর্তী : বিষ্ণুপুর থেকে প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া করে নিলে, একইদিনে পাঁচমুড়ার পাশাপাশি মুকুটমণিপুর অথবা শুশুনিয়া পাহাড় ঘুরে আসা যায়।
আমরা একটু সকাল সকাল বেরিয়ে পরেছিলাম। প্রথমে পাঁচমুড়া ঘুরে, মুকুটমণিপুর এবং শুশুননিয়া গিয়েছিলাম।
মুকুটমণিপুরের প্রধান আকর্ষণ হলো, কংসাবতী ও কুমারী নদীর মিলনস্থলে নির্মিত বাঁধ। বাঁধের উপর দিয়ে পিচ বাঁধানো রাস্তা (প্রায় সাত কিলোমিটার) দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
এখানে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। দুই নদীর মিলনস্থলে ছোটো ছোটো আইল্যান্ড আছে। যদিও নামা যায় না।
তবে নৌকো করে বনপুকুরিয়া গ্রামে যেতে পারেন, এখানের আভয়ারণ্যে অনেক হরিণ আছে। স্থানীয় বাচ্চারা গাছের পাতা (হরিণের খুব প্রিয়) আঁটি আঁটি করে বিক্রি করে, এই পাতার আঁটি দেখলেই হরিণের পাল আপনার কাছে চলে আসবে।
মুকুটমণিপুরে ড্যামের কাছেই আছে মুসাফিরানা পার্ক। এখান থেকে ড্যামের অসাধারণ view পাওয়া যায়।
মুকুটমণিপুর থেকে শুশুনিয়া অনেকটা রাস্তা। তবে শুশুনিয়া একবার ঢুকে গেলে আপনার সমস্ত ক্লান্তি কেটে যাবে, যখন আপনি দূর থেকে দেখতে পাবেন শুশুনিয়া পাহাড়।
ট্রেক করেও পাহাড়ে উঠা যায়, আবার, পায়ে হেঁটেও উপরে উঠা যায়। খাড়া রাস্তা, দুধারে বুনো গাছগাছালি, পাখির কলতান, আর কিছু দূর পর পর চা-শরবতের দোকান। উপরে উঠলে পুরো শুশুনিয়া গ্রামটিকে চোখের লেন্সে ধরা যায়।
পাহাড়ে উঠার মুখেই একটা প্রাকৃতিক জলের ঝর্ণা আছে, এবং সেখানে একটা পাথরের তৈরী নরসিংহদেবের প্রাচীন মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। এই ঝর্ণার জল স্থানীয় মানুষেরা খান, আমরাও খেয়েছিলাম।
শুশুনিয়া পাহাড়ের নীচে অনেক পাথরের তৈরী সামগ্রীর দোকান আছে, সেখান থেকে আপনি কেনাকাটাও করতে পারেন।
হাতে যদি আরো একটা দিন থাকে, যেতে পারেন “ডোকরা” গ্রাম বিকনাতে। ডোকরা হল ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ফেলে তৈরী করা শিল্পবস্তু।
তাছাড়া, যাওয়া যেতে পারে, বিষ্ণুপুরের কাছে গড়বেতা গ্রামে। গড়বেতার গনগনিতে দেখতে পাবেন ল্যাটেরাইট মাটিতে প্রাকৃতিক ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
বিষ্ণুপুরী বালুচুরী, তাঁতেবোনা শাড়ী, গামছা বিষ্ণপুরের আরেক আকর্ষণ। সরাসরি শিল্পীর বাড়িতে গিয়ে তাঁতবোনাও দেখে নিতে পারবেন।
বিষ্ণুপুরে প্রচুর হোটেল, লজ আছে। আমরা হোটেল লক্ষীপার্কে ছিলাম। লক্ষীপার্কের নিজস্ব রেষ্টুরেন্ট আছে।
তবে কাছেই মোনালিসা হোটেল আছে। সেখানে ঘরোয়া খাবার দাবার পাবেন।
বিষ্ণুপুরে এলে অবশ্যই পোস্তর বড়া, মোতিচুরের লাড্ডু খাবেন।
হাওড়া থেকে প্রচুর ট্রেন বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরে যায়। তাছাড়া, দূর্গাপুর থেকে বাসেও যেতে পারেন।