সম্প্রীতির চেনা ছবিটি হটাৎ বদলে গেল হিংসায়

Social

কৌশিক আইচ: গত বৃহস্পতিবার তিন ভারতীয় মৎস্যজীবী মুর্শিদাবাদের জলঙ্গী থেকে রওনা হয়ে নৌকায় পদ্মানদীতে ইলিশের সন্ধানে যায়। বাংলাদেশের বেশ কিছুটা অভ্যন্তরে অগ্রসর হওয়ার কারণে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ বা বিজিবি’র নজরে পড়ে যায় ওই তিনজন মৎস্যজীবী এবং সীমান্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে তৎক্ষণাৎ তাদের গ্রেফতার করে তারা। বিজিবি’র জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন ওই মৎস্যজীবীরা জানান তারা বিএসএফের যাবতীয় অনুমতি নিয়েই সীমানা অতিক্রম করে পদ্মায় মৎসের সন্ধানে এসেছেন। কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পরে বিজিবি’র পক্ষ থেকে দুই মৎস্যজীবীকে ছেড়ে দিলেও একজনকে আটক রাখা হয়। ছেড়ে দেওয়া মৎস্যজীবীদের মাধ্যমেই খবর পাঠানো হয় জলঙ্গীর কাকমারিচকে ১১৭ নম্বর ব্যাটালিয়নের বিএসএফ জওয়ানদের ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য এবং সেখানেই বাকি এক মৎস্যজীবীকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানানো হয়। সেই মোতাবেক তারা এসে সেই সংবাদ প্রেরণ করেন বিএসফ জওয়ানদের কাছে। একজন কমান্ডারের নেতৃত্বে একজন সাব ইন্সপেক্টর , কনস্টেবল এবং ছাড়া পাওয়া ওই দুই মৎস্যজীবী সহ মোট ছয়জনের বিএসএফের একটি দল ওই মৎস্যজীবিকে উদ্ধার করার জন্য ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে অংশ নিতে স্পিডবোটে পদ্মার বুক চিরে এগোতে থাকেন বিজিবি’র চৌকির উদ্দেশ্যে। ঘটনাস্থল রাজশাহী চারঘাট উপজেলার বালুঘাট এলাকায়। পৌঁছে দুই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা থেকে শুরু করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। এমতাবস্থায় দুইবাহিনীর বোটের মধ্যে ধাক্কা, উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। বিজিবি’র আক্রমণাত্মক মনোভাব বুঝতে পেরে বিএসএফ জওয়ানরা ফিরে আসার জন্য বোট ঘুরিয়ে নেয়। ঠিক এইসময়ই বিনা প্ররোচনায় বিজিবি’র জওয়ানরা অতর্কিত গুলি ছুঁড়তে শুরু করে দেয়। হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিংয়ের মাথায় গুলি লাগে এবং বোটে ফিরে আসার পথেই তার মৃত্যু হয়।

আরেক কনস্টেবল রাজভীর সিংয়ের ডান হাতে গুলি লাগে। যদিও এর প্রত্যুত্তরে বিএসফ জওয়ানদের পক্ষ থেকে কোনো পাল্টা প্রত্যাঘাত করা হয় নি।

দিনকয়েক আগেই দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে সীমান্তে স্থায়ী শান্তিস্থাপনের ব্যাপারে কথা হয়। তাই এদিনের ঘটনা উভয় দেশের কাছেই অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
সুদূর অতীতে প্রায় কয়েক দশক দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কখনো গোলাগুলি চালনার ঘটনা ঘটেনি। উভয় পক্ষের মধ্যেই বজায় ছিল হৃদ্যতার সম্পর্ক। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এদিনের ঘটনা ব্যতিক্রমই বটে।

এখন প্রশ্ন হলো ! কী করছিলেন বিজয়ভান ? খুব সহজ উত্তর তিনি ছিলেন কর্মরত । কাকে বাঁচাতে ছুটে গেলেন ? দিন আনা দিন খাওয়া বাংলার এক গরিব মৎস্যজীবীকে ।

মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা এই সংবেদনশীল একটি ঘটনা শোনার পরও কেমন যেন নির্লিপ্ত, নির্বিকার। এক্ষেত্রে আমাদের দেশপ্রেমীকতা কোন অন্তরালে লুকিয়ে থাকলো ? শহীদ হয়ে যাওয়া এই জওয়ানের কি প্রাপ্য ছিলোনা যথোচিত সম্মান বা মর্যাদা ? কর্মের প্রতি দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যপরায়ণতার নজির রেখে এক দরিদ্র মৎস্যজীবীকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে বিজয় ভান আজ শহীদ। আমরা কি শহীদ জওয়ান বিজয়ভান সিংয়ের স্মরণে কোনো মোমবাতি মিছিল বের করতে পেরেছি ?
হয়তো চিঠিপত্রের আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিষয়টি আজ সমাপ্তের পথে। শহীদ বিজয় ভানের জন্য কি বাঙালি হিসেবে আমরা একটু সৌজন্যতাবোধ দেখাতে পারতাম না ?

(ছবি: সংগৃহীত)