পল মৈত্র,দক্ষিন দিনাজপুরঃ খনন কার্যের অভাবে আজও মাটির নিচে চাপা পড়ে রয়েছে ২৫০০ বছরের পুরানো বানগড়ের ইতিহাস৷ সেই সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে এই প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন সমৃদ্ধ স্থান৷ ১৯৩৮ সালে প্রথম বানগড়ে খনন কার্য চালানো হয়৷ সেই সময় প্রাচীন ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য উঠে আসে৷
তারপর আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) উদ্যোগে বেশ কয়েক বার খনন কার্য হয়েছে৷ তাতে পাল, সেন ও মৌর্য যুগের বহু নির্দশন পাওয়া যায়৷ কিন্তু আজও খনন কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি৷ ফলে নিতান্ত অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই বানগড়৷ এই নিয়ে জেলার বাসিন্দা ও ইতিহাস বিদদের মধ্যে ক্ষোভ জমেছে৷
এই বিষয়ে জেলার এক বাসিন্দা বিশ্বপ্রীয় সাহা বলেন, বানগড়ের রক্ষণাবেক্ষণ খুবই দরকার৷ সমগ্র উত্তরবঙ্গে এরকম প্রাচীন ঐতিহাসিক নির্দশন আর নেই৷ বেশ কয়েকবার খনন কাজে বহু প্রাচীন নিদর্শন মিলেছে৷ কিন্তু বর্তমানে খনন কার্য বন্ধ হয়ে আছে৷ যার ফলে বানগড়ের বহু ইতিহাস আজও মাটির তলায় চাপা পড়ে আছে৷ খনন কাজ শেষ করা হলে হয়ত আরও অনেক কিছু পাওয়া যেত৷ প্রশাসনের কাছে আবেদন করব ফের খনন কার্য শুরু করা হোক৷ গঙ্গারামপুর ব্লকের শিববাড়িতে ঐতিহাসিক নিদর্শন সমৃদ্ধ এই বানগড় অবস্থিত৷ বর্তমানে এটি ঢিবির আকারে রয়েছে৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন অধ্যাপক কুঞ্জগোবিন্দ গোস্বামীর নেতৃত্বে ১৯৩৮-১৯৪১ পর্যন্ত এখানে প্রথম খনন কাজ হয়৷
১৪১ একর জায়গা জুড়ে বিশাল মাটির ঢিপি এবং চারপাশের ১০০০ একর জায়গা জুড়ে এএসআই অনুসন্ধান চালায়৷ তাতে মৌর্য, গুপ্ত ও সেন যুগের বহু প্রাচীন নির্দশন পাওয়া যায়৷ সেগুলির বেশিরভাগই বালুরঘাট মিউজিয়ামে রাখা আছে৷ কথিত আছে এই গড় থেকে রাজ্য শাসন করতেন বালি রাজা৷ তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে বান রাজা হয়েছিলেন৷ তাঁর নাম অনুসারেই এর নাম হয়েছে বানগড়৷
এখানে গুপ্ত যুগের বৃহৎ দেওয়াল, তামার মুদ্রা, পাল যুগের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, মৌর্য যুগের পাতকুয়া, পোড়ামাটির থালা, বিভিন্ন ধরনের মৃত্পাত্র, পাথরের মালা, তামার মুদ্রা ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে৷ তাছাড়া পোড়ামাটির স্ত্রী মূর্তি, ব্রাহ্মীলিপি যুক্ত পোড়ামাটির শিলিং, নগর রক্ষায় নির্মিত পোড়ামাটির ক্ষেপনীও পাওয়া গিয়েছে৷ কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে খনন কার্য বন্ধ থাকায় জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে৷
ফলে আরও নিদর্শন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সেই সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বানগড়ের মতো অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শনকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্তত সীমানা প্রাচীর দেওয়া উচিত৷ না হলে এই নিদর্শন একদিন হারিয়ে যাবে৷