দেবু সিংহ,মালদা: মাথার উপর খোলা আকাশই ওদের ছাদ। ফুটপাত, পাড়ার গলি, দোকান ঘরের চালা ও গাছতলাই ওদের ঠিকানা। আত্মীয়-পরিজন বলতে, সাধারণ মানুষ আর কিছু দোকানদার। যাঁরা রেগে গিয়ে মাঝে মাঝে মুখ ঝামটা দিলেও দিনের শেষে কিছু না কিছু খাবার তুলে দেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি লকডাউনে কার্যত অনাহারে দিন কাটছে এই ভবঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীদের ।
সারাদিন ঘুরেও জুটছে না একটু খাবার। করোনা ভাইরাস, লকডাউন এসব কিছুই জানে না ওরা। জানা গেছে নাম পরিচয়হীন ৩ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির ভবানীপুর গ্রামে রয়েছে। দিনের বেলায় মাথায় পুঁটুলি নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা হলে ওরা কারো দোকান ঘরের চালার নিচে আশ্রয় নেয়। শীত, বর্ষা কিংবা গ্রীষ্ম তাদের কাছে কোন তফাৎ নেই। গ্রামবাসী ও দোকানদারের দয়ায় খাবার জুটলেও কখনো কখনো অনাহারে কাটছে তাদের দিন। শুধু খাবারের দুশ্চিন্তা নয়, ওর করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। কারণ, তাঁদের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ কিংবা মাস্ক কিছুই নেই। জ্বর-সর্দি কাশি হলেও তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাবেন কে, তাদের কোনও ব্যবস্থাও নেই। তবে, এই মুহূর্তে তাঁদের খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ভবানীপুর গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ নাজিম আক্তার জানান ওরা বেশিরভাগ সময় দুপুর ও সন্ধ্যা নাগাদ ভবানীপুর ব্রিজ মোড়ে বিভিন্ন হোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেন। কিছু না কিছু জুটে যেত। কিন্তু, সেই সব হোটেল এখন বন্ধ। অন্যান্য দোকানদার যাঁরা সাহায্য করতেন, তাঁদের দোকানেরও ঝাঁপ পড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ যাঁরা মাঝে মাঝে পাউরুটি, কলা, রুটি দিতেন, তাঁদের বেশিরভাগই লকডাউনের জন্য এখন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে, খাবারের প্রায় সমস্ত সংস্থানই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
দীর্ঘ চার মাস ধরে ভবানীপুর গ্রামে ট্যাপকলে জল পাওয়া যাচ্ছে না।
ভবানীপুর গ্রামের এক স্থানীয় চা বিক্রেতা তাজিমুল হক জানান ভবানীপুর ব্রিজ মোড়ে একজন পুরুষ ও দুই জন মহিলা সহ মোট তিন জন ভারসাম্যহীন ভবঘুরে রয়েছে।কেউ রয়েছে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কেউ আবার প্রায় বছর খানেক ধরে। তাদের নাম পরিচয় কেউ জানে না। কোথা থেকে এসেছে কেউ জানে না।
সারাদিন গ্রামে গ্রামে আবর্জনা কুড়িয়ে বেড়ায়।সব সময় তারা নোংরা হয়ে থাকে। স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাদেরকে পরিষ্কার কাপড় পড়িয়ে দিলেও আবার নোংরা হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামবাসীরা প্রতিদিনই কেউ না কেউ খাবার দিয়ে সাহায্য করতেন।এই লকডাউনে সকলেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঘরে ঘরে অভাব অনটন শুরু হয়েছে। তবুও গ্রামবাসীরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার দিয়ে সাহায্য করেন বলে জানান।
চাঁচলের পর এবার আরো এক মানবিকতার পরিচয় দিলেন চাঁচল মহকুমার ট্রাফিক ওসি এ এস আই হারাধন দাস ওরফে হারুবাবু। ভবানীপুর ব্রিজ মোড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরেদের স্যানিটাইজার,কিছু খাবার দিয়ে এবং নিজ হাতে মাস্ক পরিয়ে এক অনন্য নজির গড়লেন। জানা যায় হারুবাবু চাঁচল থানায় কর্তব্যরত ট্রাফিক ওসি। ৩০ মার্চ থেকে ভবানীপুর ব্রিজে নাকা চেকিংয়ে রয়েছে।
লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে চাঁচল এলাকার এক মুমূর্ষু রোগীকে নিজ বাইকে করে হাসপাতালে পৌঁছে সংবাদ পত্রিকার শিরোনামে এসেছিলেন। সেই মানবিকতার আরো এক চিত্র ধরা পড়ল হরিশ্চন্দ্রপুরের ভবানীপুর ব্রিজ মোড়ে।